সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বিদেশফেরত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার সনদ দেখানো ও কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে। মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ যাতে ঊর্ধ্বমুখী হতে না পারে সেজন্য সেজন্যই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশ থেকে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ আবারো বাড়ছে। এমন অবস্থার কারণেই বিদেশফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিদেশফেরত কয়েকজনের করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসায় তাদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী একজন যাত্রীর কাছে পরীক্ষার ভুয়া সনদ পাওয়ায় তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশ থেকে যে কোনো পথেই দেশে আসা যাত্রীদের কাছে যদি করোনা নেগেটিভ সনদ থাকে তাদের বিমানবন্দর থেকে বাসায় গিয়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলে দেয়া হয়। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মনিটরিং করা হয়। আর যাদের কাছে কোনো সনদ থাকে না তাদের বিমানবন্দর থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের রেখে পরীক্ষা করে যদি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তাহলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার শর্তে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর তাদের যদি পজিটিভ রিপোর্ট আসে তাহলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে আবুধাবিসহ একাধিক জায়গা থেকে বিমানযোগে ঢাকায় আসা প্রায় ২৫ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করে পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ায় তাদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে বিদেশগামী একজন যাত্রী ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় করোনা পরীক্ষার সনদ দেখতে চাইলে ওই যাত্রী যে রিপোর্ট দেখান তার সঙ্গে সার্ভারে থাকা সনদের মিল পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ওই যাত্রীকে আটকে সনদ পরীক্ষা করে দেখা যায় তা ভুয়া। ওই যাত্রীকে পরে বিমানবন্দরের দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে পুলিশ ওই যাত্রীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে দিয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন থেকে এমন করেই কঠোর কিছু পদক্ষেপ নেবে। কারণ মানুষ নানাভাবে সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে করোনা সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক শিক্ষিত মানুষকেও বুঝিয়ে সচেতন করা যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে যাত্রীরা সনদ ছাড়া কিভাবে বিমানে উঠছে তখন তাঁরা কিভাবে উঠছে তা স্বাস্থ্য বিভাগের বোধগম্য হচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি বিমান কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আরো দায়িত্বশীল হওয়া প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। কারণ যে কোনো দেশ থেকে যাত্রী বিমানে তোলার আগে তাদের দেখা উচিত ওই যাত্রীর কাছে করোনা নেগেটিভ সনদ আছে কিনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বন্দর হয়ে মোট ৫ হাজার ৩১৬ জন যাত্রী দেশে ঢুকেছে। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো দিয়ে দেশে এসেছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৪৩৭ জন। স্থলবন্দরগুলো হয়ে ৫৬৮ জন ও সমুদ্রবন্দর হয়ে ৩১১ জন দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে এক হাজার ৪৮ জনকে কোয়ারেন্টিনে এবং ১৮১ জনকে আইসোলেশনে দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, স্বাস্থ্য বিভাগ এখন প্রতিটি এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে। যারাই বিদেশ থেকে প্রবেশ করছে তারা যেখানেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকুন না কেন, প্রবেশকালে বন্দরের দেয়া ঠিকানা সংগ্রহ করে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা সেটি মনিটরিং করছেন। তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে অনেকেরই পাসপোর্টের ঠিকানা এখন আর মিলছে না। হয়তো পাসপোর্টে যখন স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা যা দেয়া হয়েছিল ওই ঠিকানায় অনেকেই থাকছে না কিংবা বিদেশ থেকে এসে অন্য কোথাও উঠছে। ফলে তাদের খুঁজে বের করা কিছুটা কঠিন হচ্ছে। তাছাড়া অনেকে মোবাইল ফোন নম্বরও সঠিকভাবে দিচ্ছে না, আবার অনেকে কাগজে যে নম্বর দিচ্ছে পরে হয়তো তা বন্ধ করে রাখছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌস জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এমন অবস্থায় আবারো বিদেশফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে দেশে যাতে করে সংক্রমণ বেড়ে না যায় সেদিকে সরকার সতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা অনুসরণ করা হচ্ছে। এর আগে একাধিক দেশ বাংলাদেশি যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।