রাজবাড়ীর একমাত্র সুইমিং পুলটি প্রতিষ্ঠার পর দেড় যুগ ধরে অকেজো হয়ে রয়েছে। বেশ কয়েকবার সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তা কয়েক মাসের বেশি সচল রাখা সম্ভব হয়নি।
রাজবাড়ী ক্রীড়া পরিষদ সুত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কের পাশে শহরের ভবানীপুরে প্রায় ৩ একর জমির উপর সুইমিং পুল স্থাপন করা হয়। এতে নির্মান ব্যয় হয় মোট তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা। চারপাশে প্রাচীর ঘেরা। রয়েছে একটি কমপ্লেক্স। সুইমিং পুল পরিচালনা ও দেখভাল করার দায়িত্ব রাজবাড়ী জেলা ক্রীড়া সংস্থার। এটি দেখভালের জন্য আলাদা ভাবে কোনো সরকারি ভাবে আর্থিক বরাদ্দ নেই। সাধারণত সবসময় বন্ধ রাখা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সুইমিং পুলের প্রধান ফটক বন্ধ। যোগাযোগ করার পর একজন এসে ফটক খুলে ভেতরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ভেতরের লাইটপোস্ট নষ্ট। ফটক দিয়ে প্রবেশের পর একটি বড় খেলার মাঠ। কয়েকজন শিশু-কিশোর ভেতরে ক্রিকেট খেলছে। সীমানা প্রাচীরের নিচ দিয়ে ফাঁকা। পানি জমে আছে। নিচ দিয়ে শুকনো থাকলে আসা-যাওয়া করা যায়। কমপ্লেক্সের ভেতরে সুইমিংপুলে কোনো পানি নেই। পুলের ভেতরে ও চারপাশের টাইলস খুলে গেছে। কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে। চার-পাঁচ বছর ধরে পানি দেওয়া হয়না।
খেলতে থাকা শিশুদের মধ্যে সীমান্ত দাস জানায়, ‘আমরা দেয়াল টপকে আসি। সকাল থেকে আজান দেওয়া পর্যন্ত মাঠে খেলাধূলা করি। আজান পড়লে আবার দেয়াল টপকে সবাই বাড়ি চলে যাই। আমরা এখানে কোনো কিছু ভাঙচুর করি না।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, সাঁতার শেখার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু এটি সচল রাখার জন্য কোন বরাদ্দ নেই। গভীর নলকূপ থেকে প্রচুর পরিমানে আয়রন উঠে। তা শোধণ করার যন্ত্র নেই। এতে করে সপ্তাহ যেতে না যেতেই পানি নষ্ট হয়ে যায়। শ্যাওলা জন্মে। বিভিন্ন পোকামাকড় হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেউ নামতে চায়না। পানি পরিস্কার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এতে করে কয়েকবার চালু করার হলে তা সচল রাখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সাঁতার শেখানোর জন্য প্রশিক্ষক রয়েছে। রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য নৈশ প্রহরীও আছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েকবার চালু করেছি। সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। এই রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকার বরাদ্দের ব্যবস্থা করলে সুইমিংপুল সচল রাখা যাবে।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান বলেন, সাঁতার খুব ভালো ব্যায়াম। আমরা ছোট বয়সে অনেক সাঁতার কেটেছি। কিন্তু এখন পুকুর বা জলাশয়গুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। আবার অনেক পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য সেখানে গোসল করা যায়না। সুইমিংপুলটি সচল করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে পুকুর ভরাটও বন্ধ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া পরিষদের সভাপতি দিলসাদ বেগম মুঠোফোনে বলেন, আমরা এবিষয়ে লেখালেখি করছি। কিছুদিন আগে অতিরিক্ত সচিব মহোদয় এসেছিলেন। তিনি এটি সচল করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা প্রয়োজনীয় উপকরণের একটি তালিকা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।