প্রতি বছর হাজারেরও বেশি দেশী-বিদেশী জাহাজ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় আসে। আর মাঝে মধ্যেই ওসব জাহাজ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিপদেও পড়ে। তবে বিপদের সময় ওসব জাহাজকে জরুরি উদ্ধারের জন্য মোংলা বন্দরে কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ ও জরুরি বার্তার ব্যবস্থা নে। সেজন্য বরং বেসরকারি বিভিন্ন উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে ওই সংকট সমাধানের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় সাড়ে ৩ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বহনকারী একটি ট্যাংকার ডুবে যায়। ওই জাহাজডুবিতে সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় রাসায়নিক সার ও ক্লিংকারবাহী জাহাজডুবিতেও সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার সঙ্গে আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি উদ্ধারকারী জাহাজ না থাকলেও মোংলা বন্দরের কোনো জাহাজ ও পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। পরিবেশবিদ ও বন্দর বিশেষজ্ঞদের মতে, মোংলা বন্দরে জরুরি অবস্থায় উদ্ধারের জন্য সক্ষম জাহাজ থাকলে এমন ক্ষতি আরো কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান বাণিজ্য বিবেচনায় নিয়ে আগামী দিনগুলোয় উদ্ধারকারী জাহাজের বিকল্প নেই বলেও তারা মত প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরে জরুরি বার্তার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময়ই জাহাজ নাবিকদের বিপদে পড়তে হয়। ফলে অনেক জরুরি খবরাখবরই দেরিতে পাওয়া যায়। কিন্তু মোংলা বন্দর থেকে হিরণ পয়েন্ট পর্যন্ত যদি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা থাকতো তাহলে জাহাজ নাবিকদের খুব বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। তাছাড়া মোংলা বন্দরে উদ্ধারকারী কোনো জাহাজও নেই। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, দেশের কোনো বন্দরেরই নিজস্ব কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ নেই। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ২৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটো জাহাজ রয়েছে। তবে বন্দরের নিজস্ব উদ্ধারকারী জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমে ২০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ক্রয় করা হবে। পর্যায়ক্রমে ওই সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করা হবে। তাছাড়া বর্তমানে মোংলা থেকে হিরণ পয়েন্ট পর্যন্ত চারটি স্থানে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ওই প্রকল্পের ৩৭ ভাগ নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে।