সম্প্রতি নেত্রকোণার কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ ধীতপুর গ্রামে একটি অসাধু মহল সকল আইন কানুন অগ্রাহ্য করে একটি ইটভাটা তৈরি করার জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়ে়ছে।
এর প্রভাবে স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি নতুন করে বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে়ছে। অথচ সরকারি ভাবে দেশের যত্রতত্র ইট ভাঁটা তৈরি না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়ে়ছে। কারণ ইটভাটার ব্যবহৃত কাঁচামাল ও কয়লা পুড়ানো ধোঁয়ায় জনজীবনে নানাবিধ কুপ্রভাব ফেলে। সেই সাথে বায়ুদূষণে দুরারোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অথচ এসব জেনে শুনেও একটি ইটভাটা গড়ে তোলার জন্য জোর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। যা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ ভাবে নজরে এসেছে। তাছাড়া নবনির্মিত ইটভাটার প্রায় ১৫০ মিটার পাশেই রয়ে়ছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। আরও রয়েছে তিনটি মন্দির, একটি মসজিদ ও কাওমিয়া মাদ্রাসাসহ ব্যাপক ফসলি মাঠ। এতে করে কোমলমতি শিশুদের সবার চলাফেরা যেমন বাঁধার সৃষ্টি হবে। তেমনি নানাবিধ রোগ পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছোট্ট গ্রামটি বিশাল জনবহুল এবং বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র হওয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের ব্যবসায়ে়র জন্য এ অঞ্চলটি বেছে নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাসহ অনেকই আক্ষেপ করে প্রতিনিধিকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে ধীতপুর গ্রামে প্রায় ৫০ কাঠার দুই ফসলি জমিতে ইট ভাঁটা তৈরি করছেন। আর যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়ে়ছেন ফসলি জমি নষ্ট করে কিছু করা যাবে না। গ্রামে যদি ইটের মাঠ তৈরি করা হয় তবে সর্বাত্মক প্রকৃতি-বান্ধব পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন ধরণের ফসলের উৎপাদন বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। পাশাপাশি সংলগ্ন দুটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা শিক্ষার পরিবেশ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে়র পরিবেশের উপর এর উপর কঠোর প্রভাব পড়বে।
ধীতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মাইনউদ্দিন প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা মালিকদের ইটভাটা নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছি কিন্তু তারা তাদের কথা কর্ণপাত না করে ইট ভাটার নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম প্রতিনিধিকে বলেন, ইটভাটা মালিকরা বেশ কয়েক বার ট্রেড লাইসেন্সের জন্য তার সাথে দেখা করেন এবং বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বললে তারা পরে আসেনি।
এবিষয়ে ধীতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রোকন উদ্দিন বিশ্বাস প্রতিনিধিকে বলেন, এখানে ইটের ভাঁটা স্থাপন করা হলে স্থানীয় পরিবেশের উপর এক বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলবে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জমির মালিক আবু বক্কর এর নিকট জানতে চাইলে তিনি প্রতিনিধিকে জানান, আমরা চার ভাই দুই ফসলির ৫০ কাঠা জমি বাৎসরিক নগদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ইট ভাঁটা করার জন্য একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী বেখুরিয়াকান্দা শুনই গ্রামের আবদুল আউয়াল তালুকদারের কাছে ভাড়া দিয়েছি। ইট ভাটার মালিক আমার বড় ভাইয়ের আত্মীয় বলে ভাড়া দিয়েছি।
এবিষয়ে ইট ভাটার মালিকের পক্ষে দায়িত্বে স্থানীয় বাসিন্দা ম্যানেজার বাবু চঞ্চল প্রতিনিধিকে জানান, তারা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের ইটভাটা তৈরির অনুমতি নিয়ে়ছি। ইতিমধ্যেই ময়মনসিংহ বিভাগের পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনুমতি দিয়েছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই ভাটাটি কার্যকর হবে।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা প্রতিনিধিকে জানান, এটি অবৈধভাবে ইটভাটা তৈরি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে কোন ইট ভাটাকে চলতে দেওয়া হবে না। আমি পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকতাগন আসলে পরে তাদের নিয়ে সরেজমিনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগের পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ফরিদ আহমেদ এর মুঠোফোনে জানতে চাইলে ইট ভাঁটা নির্মাণের অনুমতি কথা অস্বীকার করে প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ইট ফিল্ডের মালিক তাদের কাছে কোনও আবেদন জমা দেয়নি। পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা খামার জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণের সুযোগ নেই। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা শীঘ্রই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে তিনি জানান।
সংযুক্ত ছবি :নেত্রকোনার কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের বিদ্যালয়ের কাছে একটি ইটের ভাঁটা তৈরি করা হচ্ছে।