জননেত্রী সৈনিকলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন-চট্টগ্রামে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরী করতে হবে। এরপর এদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এই ইয়াবার কারণে যুবসমাজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে যারা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ইয়াবা ব্যবসা করে এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতারা লাফিয়ে লাফিয়ে কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। সমাজে তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। তা নাহলে যুবসমাজের সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। চট্টগ্রামে ফিটনেটবিহীন গাড়ীর ব্যবসাও এখন রমরমা। অবৈধ যানবাহনের কারণে শহরে নিত্য যানজট চলছে। যাত্রীরা দুর্ভোগ পৌহাচ্ছেন। একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ পুলিশদের ম্যানেজ করে ফিটনেসবিহীন গাড়ী দেদারছে চলছে। এতে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েই চলেছে। বুধবার সকালে হালিশহর সবুজবাগের নিজস্ব অফিসে শীর্ষ অনলাইন নিউজ এজেন্সি এফএনএসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. সেলিম বলেন, চট্টগ্রাম শহরে অন্তত তিন লক্ষ রিক্সা চলছে। এরমধ্যে ৭০হাজার রিক্সার লাইসেন্স আছে। এগুলোর মধ্যে নবায়ন হয়েছে ৬৩হাজার রিক্সার। ওদিকে ভ্যানগাড়ী চলছে দুইলক্ষ। এরমধ্যে লাইসেন্স আছে ১৪হাজার ভ্যান গাড়ীর। যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বৈধ পন্থায় ব্যবসা করছেন; তারা আজ পথের ভিখারী হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখানে রিক্সা নিয়ে চলছে রীতিমত এক নৈরাজ্য। এতে কোনো শৃঙ্খলাও নেই। অবৈধ রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনো কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছেনা। বরং পুলিশকে চাঁদা দিয়েই এসব গাড়ী রাস্তায় চলছে বলে লোকমুখে শুনা যাচ্ছে। এতে সরকার প্রতিমাসে এই খাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি-অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর চালক-মালিকরা শতকরা ৯০জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এসব রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের অলিগলিতে যে সকল গ্যারেজ গড়ে উঠেছে সেগুলোরও কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। আবার ব্যাটারী চালিত রিক্সাও মাঝে মাঝে চলে। এটা নিয়ে রীতিমত ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে পুরো নগরীতেই। ওদিকে সিটি করপোরেশন প্রদত্ত একটি একই নাম্বারের প্লেট জালিয়াতি করে ৪টি প্লেট তৈরী করে আলাদা আলাদা জায়গায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই প্লেট ব্যবসায় জড়িত চৌমুহনীর দুবাই হোটেলে বসে কাদের মজুমদারসহ প্রায় ১০জন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তাছাড়া অবৈধ রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ীর গ্যারেজ গুলোতে রমরমা জুয়ার আসর ও ইয়াবা সেবনও চলে। এরা মাঝে মাঝে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় জ¦ালাও-পোড়াও আন্দোলনেও শরীক হয়। এরা আবার দেখি আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মোবাইলে সেলফিতুলে গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। এটা দু:খজনক ঘটনা। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা এগুলো দেখা উচিত।
মো. সেলিম বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন জড়িত। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেক অপকর্মের প্রতিবাদ করে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। বিনিময়ে কিছুই পাইনি। করোনাকালীন সময়ে সরকারের কোনো প্যাকেজের সহায়তাও পায়নি। এগুলো নিয়ে দুর্র্নীতি হয়েছে যথেষ্ট। মো. সেলিম চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের(রেজি:নং-২১০৩) সভাপতি ছাড়াও বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন। তিনি বলেন, আমার সবুজবাগের নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলার জন্য অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা আমাকে হামলা চালিয়ে মারধর করারও হুমকি দিচ্ছেন। এজন্য একজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে সাধারণ ডায়েরীও করেছি। আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও আমি কারও ক্ষতি করিনি। বরং নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ার মুখে তুলে দেওয়ার কাজ করছি।
মো. সেলিম শহরে অবৈধ ফিটনেসবিহীন গাড়ী প্রসঙ্গে বলেন, ফিটনেস বিহীন গাড়ীর ব্যবসা রমরমা চলছে। লক্কর-ঝক্কর গাড়ী বেপরোয়া গতিতে চলার কারণে অকালে রাস্তায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। যানবাহনে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। যারা এগুলো তদারকি করে তারাও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। এটা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। অথচ প্রতিদিন যানজটে পড়ে মানুষের কর্ম ঘন্টাও নষ্ট হচ্ছে। সুতরাং ওই সকল অবৈধ ভ্যান গাড়ী এবং রিক্সার বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ইয়াবা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, শহরের নানা জায়গায় ইয়াবার কারবার চলছে। ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িতরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। মাঝে মাঝে র্যাবের অভিযানে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়েন। কিন্তু যারা এদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা আড়ালেই থাকেন। সরকারের উপরের মহল প্রশাসন দিয়ে সঠিক তালিকা করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ইয়াবা সেবন এবং বিক্রেতারা নারী ব্যবসার সাথেও জড়িত। এদের কারণে অভিভাবকদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী মন্ত্রী মহোদয়, র্যাবের মহাপরিচালক মহোদয়, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার মহোদয়, জেলা প্রশাসক মহোদয় ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মহোদয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তাছাড়া এই ধরণের অভিযানের সময় অবৈধ গাড়ী চিহিৃত করতে আমার কোনো সহযোগিতা করতে হলেও আমি অবশ্যই করবো। আমার মোবাইল নাম্বার:০১৫৫৩-১৩৪৬৬৭।