চলচ্চিত্রের অবস্থা এমনিতেই ভালো নয়। এর ওপর করোনা মহামারিতে এই ইন্ডাস্ট্রি আরো পিছিয়ে পড়েছে। হল খুললেও ছবি মুক্তির সাহস পাচ্ছেন না প্রযোজকরা। করোনার কারণে বেশকিছু ছবির শুটিংও আটকে গিয়েছিল। এখন সীমিত পরিসরে চলছে শুটিং। তবে বেশকিছু বড় মাপের ছবির কাজ শেষ হলেও এ পরিস্থিতিতে লোকসানের ভয়ে সেগুলো মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। চলচ্চিত্রের অবস্থা যখন এই, ঠিক তখন চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসিতে চলছে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক পর্যায়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একে অপরকে দোষারোপের রাজনীতি চলছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, করোনাকালের মধ্যে এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়টি বেড়েছে কয়েক গুণ। এফডিসিতে আসলে হচ্ছেটা কি- এমন প্রশ্ন দর্শক, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে বার বার উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কারণ যেখানে চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের কেউ কেউ সিনেমার বর্তমান অবস্থাকে আইসিইউ আবার কেউ কেউ মৃত বলছেন, সেখানে এফডিসিকেন্দ্রিক এমন দলাদলি কিংবা রাজনীতি কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিনেমার বর্তমান দুরবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজাই যেখানে এফডিসির বিভিন্ন সংগঠন এবং নেতাদের মূল উদ্দেশ্য হওয়ার কথা, সেখানে ‘কার জোর কত বেশি’ সেটা দেখানোর পথেই যেন হাঁটছেন তারা। এফডিসিতে দলাদলি কিংবা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়টি নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটি বেশ নোংরা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি ২০১৯-২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচন, তদন্ত কমিটি দ্বারা অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় ভেঙে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির কমিটি। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবকে প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, প্রযোজক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুসহ চারজন প্রযোজক নেতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিধিবহির্ভূতভাবে তথ্য গোপন করে গত বছরের ২৭শে জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেন। প্রযোজক সমিতির সদস্য ও অভিনেতা জায়েদ খান বিষয়টি লিখিতভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানান। মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তদন্তে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ চারজন হাইকোর্টের রিট থাকা সত্ত্বেও গোপনভাবে নির্বাচনে অংশ নেন। আর তার জন্যই প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে সদ্য আদেশে বাতিলকৃত প্রযোজক সমিতির নেতারা। এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। অন্যদিকে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে বয়কট করা হয়। এমনকি প্রযোজক সমিতির সদস্যপদও স্থগিত করা হয় তার। তবে ১৬ই নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো আদেশে বলা হয়েছে, জায়েদ খানের প্রযোজক সমিতির সদস্যপদ সাময়িকভাবে বাতিল করার বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত প্রতীয়মান হয়নি। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাকে বাধা না দেয়ার জন্য বলা হয়। এফডিসিতে কি এমন দলাদলি কিংবা রাজনীতি হওয়া উচিত? এমন প্রশ্ন রাখলে উত্তরে জায়েদ খান বলেন, একদমই না। শুরুটা কিন্তু তারাই করেছে। আমি কখনো কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। কিন্তু আমাকে নিয়ে সেটা করা হচ্ছে। আমি সিনেমার মানুষ। সিনেমা এবং এই অঙ্গনের মানুষ নিয়ে কাজ করাই আমার কাজ। অন্য কিছু নয়। এফডিসিতে এখন যেটা হচ্ছে সেটা অনাকাক্সিক্ষত। সিনেমার প্রকৃত উন্নয়ন চাইলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে এতোগুলো সংগঠন এক কেন হলো? জায়েদ উত্তরে বলেন, তারা আসলে সহ্য করতে পারে না। সবই জেলাসি। সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পীরা সবাই আমাকে পছন্দ করেন। আমি শিল্পীদের জন্য কাজ করি। সবার চোখের মণি হয়ে গেছি। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি তারা।