চট্টগ্রামে তৈরীকৃত ভেজাল ওষুধ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ক্রমেই ভেজাল, মানহীন ও নকল ওষুধে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে ওষুধের বিশাল বাজার। এসব ভেজাল ওষুধের কারণে প্রাণ রক্ষার ওষুধে এখন প্রাণ শেষ হওয়ার ভয় রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে চিকিৎসা নিতে ছুটে যাওয়া মানুষগুলো ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছেন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অধিক মুনাফার লোভে বিক্রি করছেন এই সকল নকল ওষুধ। ফলে রোগ তো কমছেই না বরং মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। এতে ভেজাল ওষুধ খেয়ে কিডনি বিকলসহ জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ভেজাল ওষুধ তৈরী এবং বিক্রেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত।
একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রতিমাসে অন্তত শতকোটি টাকার ভেজাল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এই ওষুধ শুধু চট্টগ্রামেই তৈরী হচ্ছেনা। দেশের নানা জায়গায়ও দেদারছে তৈরী হচ্ছে। এই ব্যবসা নিরাপদে চালিয়ে যাওয়ার জন্য একশ্রেণির প্রশাসনের লোকজনকেও মাসোয়ারা দেওয়া হচ্ছে। আবার কতিপয় রাজনৈতিক নেতারাও ভেজাল ওষুধ তৈরীকারীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম শহরে বেশকিছু জায়গায় ভেজাল ওষুধ তৈরী হচ্ছে। আর তা প্রকাশ্যে ফার্মেসীগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে এই ভেজাল ওষুধ বিক্রি চলছে বহুদিন। নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীরা বাজারে নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধের মোড়ক, প্যাকেট এবং বোতল হুবহু নকল করে ওষুধ তৈরি করছেন। পাইকারি মূল্য অত্যধিক কম হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিম্নমানের এই ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে যৌন রোগের এবং ভিটামিন ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বেশি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে যে ওষুধের নাম লেখা থাকে তারা তা না দিয়ে রোগীকে একই ওষুধ, একই গ্রুপ বলে নিম্নমানের অথবা নকল ওষুধ কিছু টাকা কমিশনের নামে ছাড় দিয়ে বিক্রি করছেন। ওদিকে বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে এমন ধরনের বিভিন্ন প্রকার ভেজাল ও নকল অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন, ক্যালসিয়াম, শক্তিবর্ধক ও অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আর রোগীদের এমন ধরণের অভিযোগের ভিত্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও নড়ে চড়ে বসে।
সূত্র জানায়, শহরের কালুরঘাট এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে গত তিন বছর যাবত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ বানিয়ে বিক্রি করছিল হোসেন নামে (৪০) এক প্রতারক। তার বাড়ি চাঁদপুর। তবে নকল এই ওষুধ তৈরির কারখানা গড়েছিল চান্দগাঁও থানার মোহরার পুরাতন কালুরঘাট এলাকায়। এখানে আটা, ময়দা ও নানা কেমিক্যাল দিয়ে একই রকমের ওষুধ তৈরি করা হয়। আর তা নানা মোড়কে ভিন্ন রোগের জন্য ভিন্ন নামে বিক্রিও করছিল সে। গত ২১নভেম্বর সকালে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টীম সেই প্রতারক হোসেনকে আটক করে। পরে ওই ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, ওষুধ এক ধরনের বিষ। এই বিষ আমরা শরীরে প্রয়োগ করি প্রয়োজনে। সেই ওষুধটা তৈরি এবং বাজারজাতকরণে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে নানা জায়গায় লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। ওষুধের বৈধ প্রয়োগে দশ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এতে যদি সে ওষুধ হয় ভেজাল, তাহলে মৃত্যু হারও অনেক বেড়ে যাবে। ভেজাল ওষুধের প্রতিক্রিয়া প্রবীণ ব্যক্তি, গর্ভবতী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আর এর নেপথ্যে যারা আছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত।