প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৮১ সালে আমার র্দুদিনের সময় পাবনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভ্যান গার্ডের মত আমার পাশে ছিলেন। জীবনের ঝুকি নিয়ে সেই সময়ের তারা বিএনপির সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করেছে। নিরাপত্তা বেষ্ঠনি তৈরি করে আমাকে পাবনা থেকে নাটোর হয়ে রাজশাহী নিয়ে গেছেন। বিশেষ করে আজকে যার নামে এই স্বাধীনতা চত্বর নামকরণ করা হলো সেই রফিকুল ইসলাম বকুলের অবদান কোনভাবেই ভোলার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের মামার বাড়ী পাবনায় হওয়ায়। আমি তাকে মামা বলে ডাকতাম, দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে রফিকুল ইসলাম বকুল পরবর্তিতে দল বদল করলেও আমি তার ঐ সময়ের কথা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সমকয়কার অবদানের কথা আমি ভুলব না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, রফিকুল ইসলাম বকুলের নামে স্বাধীনতা চত্বর করার ব্যাপারে আমার দলের লোকজনের আপত্তি ছিল। তার পরেও আমি মনে করেছি যার যতটুকু অবদান তাকে তার স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। সর্বপরি বকুল মামা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিবাহিনী এবং মুজিব বাহিনীর পাবনা অঞ্চলের প্রধান ছিলেন। তিনি এই স্থানে পাকিস্তানী পতাকা ছিড়ে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক এ স্থানটি সংরক্ষণে পাবনার বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসায় আমি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুসহ পাবনার মানুষকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। রফিকুল ইসলাম বকুল একজন অকুতোভয় দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবনার বীরমুক্তিযোদ্ধার রফিকুল ইসলাম বকুল স্মরণে ‘স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতা চত্বর উদ্বোধন উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা চত্বর প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় উপদেষ্টা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি, আলহাজ মকবুল হোসেন এমপি, নুরুজজামান বিশ্বাস এমপি, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম, পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুসহ সকল পৌরসভার মেয়র, পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারোফ হোসেনসহ সকল উপজেলা চেয়ারম্যান, পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আবদুল মতীন খান, সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল লতিফ বিশ্বাস, ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেন, পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনি, যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক, রানা গ্রƒপের চেয়ারম্যান রুহুল আমি বিশ্বাস রানা, পাবনা চেম্বারের সহসভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশা, প্রয়াত রফিকুল ইসলাম বকুলের স্ত্রী নাসিমা ইসলাম, মেয়ে রাফিকা ইসলাম, ছেলে নুর ইসলামসহ পাবনা পৌরসভার সকল কাউন্সিলর ও শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, এক সময়ের টাউন হল নামের এখনকার স্বাধীনতা চত্বর ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য এই মাঠ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অশ্বিনী কুমার দত্ত, এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ বড়মাপের নেতা ভাষণ দিয়েছেন এখানে আয়োজিত জনসভায়। ১৯০৮ সালে এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন, যেখানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দীনসহ বহু শিল্পী এখানে গান গেয়েছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মাঠেই পাকিস্তানের পতাকা ছিঁড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তোলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল। ২০০০ সালে ১০ নভেম্বর তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলে পাবনা পৌর কর্তৃপক্ষ এটিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেয়। সময়ের প্রয়োজনে এটিকে আরও আধুনিকায়নের দাবি ওঠে। আধুনিকায়নের পর এর নাম দেয়া হল স্বাধীনতা চত্বর। এই স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পাবনায় ছিল উৎসব আমেজ।
আধুনিয়কয়নের পর এটি হল উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মধ্যে অন্যতম স্বাধীনতা চত্ত্বর। যেখানে প্রতিটি ইট পাথরের ডিজাউনে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২টি উক্তিসহ ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিদ্যমান। স্বাধীনতা চত্ত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দু‘টি গ্রীণ রুম এবং ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্ত ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্ত ১১৭ ফুট। যার তিন দিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারী রয়েছে। মাঠের উত্তরপুর্ব কনার্রে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পুর্ব কণার্রে ছোট একটি গেট রয়েছে। এ ছাড়া সর্বপরি পুরো মাঠে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন সবুজ ঘাস।