ঝালকাঠির রাজাপুরের নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শ্রমজীবী সরোয়ার হোসেন মৃধার পায়ে লোহা ঢুকে পঙ্গু হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা, চলছে না ঠিক ভাবে সংসার। তিনি যখন যে কাজ পেতো তখন তাই করতো। যা উপার্জন হতো তাই দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সংসারের খরচ চালাতেন। সমাজের সবার সাথেই মিলেমিশে চলায় স্থানীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিও ছিলেন তিনি। ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক আগেই। তাই ভারী কাজ বাদ দিয়ে অটোচালানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। মাস তিনেক পূর্বে তার পায়ে একটি লোহার আঘাত লাগে। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা করালে তাতে ক্ষতস্থানের কোন উন্নতি না হওয়ায় রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা নেন। তাতেও অবস্থার উন্নতি না হয়ে অবনতির দিকে যেতে থাকলে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঢাকাস্থ বারডেম হাসপাতালে তার উন্নত চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মজীবনের উপার্জিত অর্থটুকু ইতোমধ্যে খরচ করে ফেলেছেন তার পরিবার। স্থানীয় যুবকবৃন্দ উদ্যোগ নিয়ে স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেই টাকা চিকিৎসা সেবা সহায়তার জন্য প্রদান করে। এতে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি আরো কিছুটা সহজ হয়। তাও শেষ হয়ে গেলে বারডেম হাসপাতালের সমাজ সেবা বিভাগের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়। ধাপগুলো অতিক্রমকালের মধ্যে সরোয়ার হোসেন মৃধার বাম পা’টি সম্পুর্ণ কেটে ফেলেন চিকিৎসক। এখন তিনি অচল অবস্থায় পঙ্গু হয়ে বিছানায় শুয়ে-বসে দিনাতিপাত করছেন। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে সবাইকে। রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের সরোয়ার হোসেন মৃধার সাথে কথা বললে তিনি নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে এসব কথা জানান। সরোয়ার হোসেন মৃধা জানান, স্ত্রী, ৬ কন্যা ও ১ছেলে সন্তান রয়েছে। ৫মেয়েকে পাত্রস্থ করা হয়েছে, ছোট মেয়ে কলেজে ও সবার মধ্যে ছেলে ছোট, সে মাধ্যমিকে পড়াশুনা করছে। প্রতিদিন এখন তার অনেক টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে সংসারের প্রতিদিনের খরচেও অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। জীবনমরনের সন্ধিক্ষণে এসে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
পরিবার সূত্রে জানাগেছে, সরোয়ার হোসেন মৃধা শ্রমজীবীর কাজ করে সংসার চালাতো। যা উপার্জন হতো তাই দিয়েই সংসার বেশ ভালোভাবে চলতো। ছেলে ছোট হওয়ায় এখন আর উপার্জনকারী ব্যক্তি কেউই নাই তার সংসারে। এখন একদিকে ওষুধের খরচ অন্যদিকে সংসারের খরচ চালাতে হচ্ছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সারাজীবনের অর্জন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্য সহায়তাও শেষ হয়ে গেছে। এখন অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শ্রমজীবী হলেও সামাজিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন সরোয়ার হোসেন মৃধা। তিনি সবার সাথেই হাসিমুখে কথা বলায় গ্রহণযোগ্যতাও ছিলো অনেক। তার হঠাৎ এমন এক বিপদ এল যাতে তার জীবনটা অন্ধকারে পতিত হলো। এখন তার জীবনযাপনের অবস্থা দেখলে যে কেউই কষ্ট পাবেন। তার কিছু পুঁজি হলে নিজস্ব জমিতেই একটি দোকান দিয়ে বসতে পারতেন। যা থেকে উপার্জন করে নিজেই নিজের যাবতীয় খরচ করতে পারতেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কুদ্দুস হোসেন জানান, সরোয়ার হোসেন মৃধার হঠাৎ বিপদের কারণে তার জীবনটা এখন এলোমেলো হয়ে গেছে। একসময় তার একার উপার্জন দিয়ে বেশ ভালোভাবেই সংসার চলতো। কিন্তু সেই মানুষটা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে এখন পঙ্গু হয়ে অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। চিকিৎসার সময়ে স্থানীয় কিছু যুবকেরা চাঁদা তুলে তাকে সহায়তা করেছিলো। কিছু পুঁিজ সহায়তা পেলে তিনি ব্যবসা করে শারিরীকভাবে স্বাভাবিক হতে না পারলেও জীবনযাপনে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারবে। তাই দানশীল বিত্তবানদের কাছেও অনুরোধ জানান তিনি।