শত দুঃখ-কষ্টে ঘেরা জীবন। সবে সংসারে ১৬ বছরের একমাত্র ছেলে শাহ আলম হাল ধরতে শুরু করেছে। হঠাৎ ষড়যন্ত্রমূলক একটি হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয় শাহ আলম কে। যাবৎজীবন জেল হয়। ইতোমধ্যে কেটে গেছে জীবনের নয়টি বছর। দীর্ঘ এই সময় সংসারের বোঝা ও সাত রাজার ধন একমাত্র ছেলের মামলার খরচ যোগাতে রাস্তায় রাস্তায় রুটি বিক্রয় করেছেন অসহায় এক নারী। অনেক সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে অভূক্ত থেকেছেন। কেউ তাদের খবর নেয় নি। ঘটনাটি সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিনগ্রামের অসুস্থ দিনমজুর হাচেন আলীর স্ত্রী রুটি বিক্রেতা মোছা. রহিমা বিবি’র। অবশেষে শাহ আলমের মামলার দায়িত্ব নেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী। উচ্চ আদালত থেকে তাকে জামিনে মুক্ত করেন। রোববার (২২ নভেম্বর) অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী হঠাৎ সিংড়ার বিনগ্রামে রাস্তার পাশের্^ অসহায় রহিমা বিবির রুটির দোকানে যান। জীবন যুদ্ধে হার না মানা সেই অসহায় নারীর ঘটনা শুনে রহিমা বিবির হাতে কুড়ি হাজার টাকা তুলে দেন এবং তার ছেলে শাহ আলমের মামলার সকল দায়িত্ব নিজের কাঁদে তুলে নেন তিনি।
শাহ আলম বলেন, যে হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। সে কোন ভাবেই জড়িত নন। তার ওস্তাদ কাঠমিস্ত্রি রুহুল আমিন এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। তাকে অন্যায় ভাবে নয় বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। অসহায় ও গরীবের কথা কে বা শোনে।
শাহ আলমের মা রুটি বিক্রেতা রহিমা বিবি বলেন, একদিকে সংসারের বোঝা অন্যদিকে একমাত্র সাত রাজার ধন ছেলে শাহ আলমের যাবৎজীবন দন্ডাদেশ শুনে ভেঙে পড়েছিলেন। বিনা খরচে ছেলের জামিন ও আর্থিক সহযোগিতায় খুব খুশি। বলতেই হয়, গরীবের উকিল ইউসুফ!
এডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, ২০১২ সালের একটি হত্যা মামলায় শাহ আলম কে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু তার জন্ম সনদ অনুযায়ী তখন তার বয়স ছিল ১৫-১৬ বছর। কিন্তু রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার কারণে নিষ্পাপ একটি কিশোর তার জীবনের নয়টি বছর জেলে কাটিয়েছে। তাকে জেলে না পাঠিয়ে কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো দরকার ছিল। আমি মনে করি এর জন্য রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাছাড়া এই হত্যার সাথে এই ছেলের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ যে এই হত্যা সংঘটিত করেছিল ভাড়াটে কাঠমিস্ত্রী রুহুল আমিন। আর শাহ আলম ছিল তার দোকানের হেলপার বা যোগালা। রুটি বিক্রেতা এক অসহায় নারীর জীবন যুদ্ধের ঘটনা তাকে কাঁদিয়েছে। তাই শাহ আলমের মামলার সকল দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।