দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামী ২৬ নভেম্বর কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সন্মেলন হতে যাচ্ছে। সন্মেলনকে ঘিরে দলটির তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে।
কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের তরুণ নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন। অপর দিকে দলের প্রবীণ, ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতাদেরকে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে আরেক মহলের। তবে নবীণ ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা দলের বেশীর ভাগ নেতাদের। এদিকে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রী-বার্ষিক সন্মেলনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে। গঠন করা হয়েছে প্রস্তুতি মুলক একাধিক উপ কমিটি কমিটি। সন্মেলনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। উপজেলার চান্দরাস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজ মাঠ নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে, লাগানো হয়েছে রং-বেরঙ্গের ব্যানার পোষ্টার, নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল প্যাান্ডেল।
সকল প্রস্তুতি শেষে আগামী ২৬ নভেম্বর সন্মেলন উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, কর্নেল (অব:) ফারুক খান এমপি সভাপতি মন্ডলির সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সভাপতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, ডা: দিপু মনি এমপি, মন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, মির্জা আজম এমপি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ,মেহের আফরোজ চুমকী এমপি মন্ত্রী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীল,মো: আনোয়ার হোসেন সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি। সন্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো: মুরাদ কবীর ও সঞ্চালন করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক শিকদার মোশারফ হোসেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালে। সেইবার সন্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন চাপাইর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী ছামান উদ্দিন আহম্দে ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো: কামাল উদ্দিন শিকদার। ২০১০ সালে গাজী ছামান উদ্দিন আহমেদ মারা যান। ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবদুল মান্নান শরীফকে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এঘটনার পর ২০১৩ সালে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান শরীফকে বাদ দিয়ে মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: নাসিম কবীরকে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগের ্সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেড আকম মোজাম্মেল হক এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: কামাল উদ্দিন শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সাবেক মন্ত্রী মরহুম শামসুল হক সাহেবের ভাতিজা মো: মুরাদ কবীরের নাম ঘোষণা করেন। কামাল উদ্দিন শিকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মো: মুরাদ কবীর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।এরপর জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মুরাদ কবীরকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক শিকদার মোশারফ হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়। দুই সদস্যের ওই আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে ২৬ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সন্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর সন্মেলন হচ্ছে তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। নতুন করে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীদের মধ্যে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নতুন করে দলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো: কামাল উদ্দিন শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো: মুরাদ কবীর,জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবদুল ওহাব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান শরীফ,। সাধারণ সম্পাদক পদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো: রেজাউল করীম রাসেল,জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিকদার মোশারফ হোসেন ,জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আকবর আলীর নাম শোনা যাচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো: মুরাদ কবীর জানান,৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা থেকে সোয়া তিনশ’ কাউন্সিল দলের নতুন নেতা নির্বাচন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় পর্বে হবে কাউন্সিল। জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক মো: রেজাউল করীম রাসেল বলেন, আমরা নতুন মোড়কে পুরাতন নেতৃত্ব চাই না। আমরা চাই যারা মাঠের নেতা ছিলেন,লড়াই সংগ্রাম করে দুর্দিনে দলকে সহযোগিদতা করেছেন তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত হোক। এটাই সংগঠনের ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতা কর্মীদের প্রত্যাশা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান শরীফ বলেন,আমার প্রত্যাশা নতুন কমিটি প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে গঠিত হবে। আমি চাই কাউন্সিলরের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হোক। তবে দল যে সিদ্বান্ত নিবে তা মেনে নিব।