প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচনে কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাচন ২৮ডিসেম্বর। কুড়িগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে চলছে জোর লবিং-গ্রুফিং। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছে নেতা-কর্মীদের সমর্থকদের দ্বারে দ্বারে। এ দৌড় চলছে কেন্দ্র পর্যন্ত। তফশিল ঘোষনা করার রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উৎকণ্ঠা চলছে। প্রধান দু’দলের কারা প্রার্থী হচ্ছেন এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। একই সঙ্গে রয়েছে প্রাধান দুই দলে’র অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং। প্রার্থী বিবেচনায় চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ। সরব হয়ে উঠছে চায়ের দোকান থেকে অফিস পাড়ার সর্বত্র।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, নির্বাচন সংক্রান্ত গণ-বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩ ডিসেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ডিসেম্বর, ভোটগ্রহন ২৮ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
তিনি আরো জানান, কুড়িগ্রাম পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৩৯৫ এর মধ্যে নারী ভোটার ২৯ হাজার ৪৮জন আর পুরুষ ভোটার ২৭ হাজার ৩৪৭জন। পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার এক হাজার ৭০১জন বেশী। ৯টি ওয়ার্ডে ২৪টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্য ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বর্তমান মেয়র আবদুল জলিল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজিউল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব মোস্তাফিজার রহমান সাজু, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু, জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বকসী, জেলা যুব লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুর রহমান মুমিন দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চালাচ্ছেন নিজস্ব আঙ্গিকে জনসংযোগ ও প্রচারনাও।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আবু বকর সিদ্দিক, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু, পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির বিপ্লব ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন হিমেল মনোনয়ন নিতে এগিয়ে।
আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী আলহাজ্ব মোস্তাফিজার রহমান সাজু বলেন, আমার পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে। কুড়িগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। এর আগে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দীর্ঘ দিন থেকে অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী হব।
আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজিউল ইসলাম দলের প্রার্থী হিসাবে নিজেকে সবচেয়ে বেশী যোগ্য মনে করেন। কারণ তিনি ২০১১সাল থেকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সক্রিয় ভাবে। এ সময়ে দল সুসংগঠিত হয়েছে। জনকল্যাণ মুলক কাজে তার ছিল ব্যাপক অংশগ্রহন। এ ছাড়া সরকারের নেয়া উন্নয়ন মুলক কাজের প্রচারনায় তিনি ছিলেন সক্রিয়।
আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আবদুল জলিল বলেন, এ পৌরসভাটি ছিল বিএনপির দখলে। দীর্ঘদিন পর সর্বশেষ নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হয়ে এ পৌরসভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছি। কারণ এর আগেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেয়। সে সম্মান আমি রাখতে পেরেছি। এবারও মনোনয়ন দিলে সে মর্যাদা আমি রাখতে পারব ইনশা আল্লাহ।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে দলের হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এর বাইরে শিল্প-সংস্কৃতি এবং সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে নিবেদিত প্রাণ হিসাবে কাজ করছি। দলমত নির্বিশেষে জনগনের কল্যাণে এবং সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন তড়ান্বিত করতে কাজ করছি। এসব বিবেচনায় দল মনোনয়ন দিলে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হবে আশা করি।
জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বকসী বলেন, দলের উপদেষ্টা কমিটি থেকে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। স্থানীয় ভাবে মনোনয়ন না দিলেও কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাইবো। আজ কালের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করব।
অপরদিকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছি। কুড়িগ্রাম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৪ বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্বে থেকে কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার বিএনপির রাজনীতি সুসংগঠিত করছি। এ বিবেচনায় দল আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে ইনশাআল্লাহ আমি জয়লাভ করব। এ ছাড়া আমার সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
বিএনপি’র অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসাবে দলকে সু-সংগঠিত করতে নিবিরভাবে কাজ করছি। এ পৌর সভার মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি সফল ভাবে। সে পরিচিতি এবং কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিজয় লাভ করা সম্ভব।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জু বলেন, তারা ৪টি নাম ঢাকায় পাঠাবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে দল কাজ করছে বিজয় ছিনিয়ে আনতে। তিনি আরো জানান, গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পৌর নির্বাচনে দলের প্রার্থী নির্বাচন করতে মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ হল রুমে পৌর কমিটির এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। পৌর কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় ৪জন প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এম এ চাষী করিমকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ৬৭জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে আলহাজ্ব মোস্তাফিজার রহমান সাজু-৩২ ভোট, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজিউল ইসলাম-৩১ ভোট, বর্তমান মেয়র আবদুল জলিল-২ ভোট ও যুবলীগ নেতা মমিনল রহমান মুমিন-২ ভোট লাভ করেন। সবমিলে এবারের পৌর নির্বাচনে কে হবেন পৌরকর্তা তা নিয়েই কুড়িগ্রাম শহরজুড়ে চলছে আনগোনা।