বারবার হানা দিল বৃষ্টি। ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টালো ম্যাচ। লকি ফার্গুসনের আগুনে বোলিং এড়িয়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিলেন কাইরন পোলার্ড। মিলিত চেষ্টায় সেই রান পেরিয়ে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতল নিউ জিল্যান্ড। বৃষ্টি বিঘিœত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেটে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ১০ ওভার শেষে বৃষ্টির বাধায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ১৬ ওভারে। সফরকারীরা ৭ উইকেটে করে ১৮০ রান। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে স্বাগতিকরা পায় ১৭৬ রানের লক্ষ্য, চার বল বাকি থাকতেই যা ছুঁয়ে ফেলে তারা। তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে শুক্রবারের এই ম্যাচ দিয়ে দেশটিতে ফিরল আন্তর্জাতিক ম্যাচ। দর্শকও ফিরলেন মাঠে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২১ রানে ৫ উইকেট নেওয়া ফার্গুসন ক্যারিবিয়ানদের কম রানে থামানোর আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ছয়ে নমে ৩৭ বলে অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংসে দলকে লড়াইয়ের জন্য বড় পুঁজি এনে দেন পোলার্ড। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ওভারেই পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে দলটি। হামিশ বেনেটের এক ওভার থেকে আসে ২৯। পাওয়ার প্লে দুই রকম কাটে ক্যারিবিয়ানদের। প্রথম তিন ওভারে উদ্বোধনী জুটির ব্যাটে তারা তোলে ৫৫ রান। পরের তিন ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে কেবল ৫! স্বাগতিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু লকি ফার্গুসনের হাত ধরে। ২৪ বলে তিনটি করে ছক্কা ও চারে ৩৪ রান করা ফ্লেচারকে বোল্ড করে ভাঙেন ৫৮ রানের জুটি। সেই ওভারেই শূন্য রানে বিদায় করেন শিমরন হেটমায়ার, পরের ওভারে থামান নিকোলাস পুরানকে। ফার্গুসনের দুই ওভারের মাঝে ব্র্যান্ডন কিং ও রভম্যান পাওয়েলকে ফেরত পাঠান টিম সাউদি। ওই ধসে ৫৮/০ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হয় ৫৯/৫। ১ রানে ৫ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ানদের ত্রাতা পোলার্ড। শুরুতে অধিনায়ক ছিলেন সাবধানী। বৃষ্টির জন্য সফরকারীদের ইনিংসের দশম ওভারের পর আবার খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ১৬ ওভারে। পুনরায় খেলা শুরুর পর দেখা যায় পোলার্ডের রুদ্ররূপ। ছক্কা বৃষ্টিতে দলকে ফেরান কক্ষপথে। দারুণ সঙ্গ দেন ফাবিয়ান অ্যালেন। ৫০ বলে ৮৪ রানের জুটিতে তার অবদান ২৬ বলে ৩০। আক্রমণে ফিরে অ্যালেনকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন ফার্গুসন। পরে কিমো পলকে বিদায় করে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেন তিনি। তার আগের সেরা ছিল ৪/২৬। শেষ ৬ ওভারে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ৮৪ রান। এতে সবচেয়ে বড় অবদান পোলার্ডের। ৩৭ বলে ৮ ছক্কা ও ৪টি চারে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। তার আগের সেরা ছিল ৬৮। খরুচে বোলিং করা বেনেট শেষ করতে পারেননি নিজের তৃতীয় ও ম্যাচের শেষ ওভার। দুটি বিপজ্জনক বিমার মারায় বোলিং থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। পরে বিপজ্জনক না হওয়ায় ক্যারিবিয়ান পেসার কিমো পল তিনটি বিমার মেরেও বেঁচে যান। রান তাড়ায় শুরুতেই মার্টিন গাপটিলকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। আরেক ওপেনার টিম সেইফার্টও করতে পারেননি তেমন কিছু। রানের গতিতে দম দেওয়ার কাজটা করেন গ্লেন ফিলিপস। ৭ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ২২ রান করা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে থামান ওশেন টমাস। রানের খাতা খোলার আগেই রস টেইলরের রান আউটে আবার চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ের সঙ্গে জিমি নিশামের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। খরুচে বোলিং করা নিশাম নেমেছিলেন যেন পুষিয়ে দেওয়ার পণ করে। শুরু থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হন তিনি। ধীরে ধীরে শট খেলতে শুরু করেন কনওয়েও। ২৯ বলে ৪১ রান করা কনওয়েকে ফিরিয়ে ৭৭ রানের জুটি ভাঙেন পোলার্ড। মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে বাকিটা সহজেই সারেন নিশাম। ক্যারিবিয়ানদের বিশৃঙ্খল বোলিংয়েরও যথেষ্ট দায় আছে। কিমো পল এক ওভারেই করেন চার ‘নো’ বল! ২৪ বলে পাঁচ চার ও তিন ছক্কায় ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাম। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করা স্যান্টনার তিন ছক্কায় করেন ৩১ রান। আগামী রোববার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে হবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬ ওভারে ১৮০/৭ (ফ্লেচার ৩৪, কিং ১৩, হেটমায়ার ০, পুরান ১, পাওয়েল ০, পোলার্ড ৭৫*, অ্যালেন ৩০, পল ০, কটরেল *১; সাউদি ৩-০-২২-২, জেমিসন ৩-০-২৬-০, বেনেট ২.৩-০-৫০-০, ফার্গুসন ৪-০-২১-৫, স্যান্টনার ২-০-২৩-০, নিশাম ১.৩-০-৩২-০)
নিউ জিল্যান্ড: (লক্ষ্য ১৬ ওভারে ১৭৬) ১৫.২ ওভারে ১৭৯/৫ (গাপটিল ৫, সেইফার্ট ১৭, কনওয়ে ৪১, ফিলিপস ২২, টেইলর ০, নিশাম ৪৮*, স্যান্টনার ৩১*; কটরেল ৪-০-৩০-১, অ্যালেন ২-০-৩২-০, টমাস ৩-০-২৩-২, উইলিয়ামস ২-০-৩৩-০, পল ৩-০-৩৯-০, পোলার্ড ১.২-০-১৬-১)
ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে নিউ জিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: লকি ফার্গুসন