রাজশাহীতে সরকারের অধিগ্রহণ করা জমিতে ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আনোয়ারুল করিম মুন্না নামের এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন। রোববার (২৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মুন্নার বাড়ি নগরীর মালোপাড়া এলাকায়। একই এলাকার বাসিন্দা শামসুন নাহারের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুন্না জানিয়েছেন, শামসুন নাহার প্রায় সাড়ে ৬ কাঠা জমিতে ডেভলপারের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। যে জমিতে ভবনটি নির্মাণ করছেন সেটি সরকারের অধিগ্রহণ করা। মুন্নার বাবা ফজলুল করিমের কাছ থেকে জমিটি সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু যে জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তা হয়নি। তাই এখন তিনি জমি ফেরত নেয়ার চেষ্টা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুন্নার সঙ্গে তার আইনজীবী খুরশীদ আলম বাবুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, কোন সংস্থা যে উদ্দেশ্যে কোন জমি অধিগ্রহণ করে তা না হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া ওই জমি অন্য কোনভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। বিক্রি, লিজ বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তরও করা যাবে না। যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয় তা না হলে জমি ডিরিকুইজিসন করার নিয়ম রয়েছে। ফজলুল করিমের জমি ফেরত দেয়ার জন্য রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মতামতও দিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নগরীর বোয়ালিয়া মৌজার আরএসে দাগ নম্বর- ১৯৭০, ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ এর প্রায় ২৪ শতক জমির মালিক ছিলেন। ১৯৫০-৫১ সালের দিকে পাকিস্তান সরকার তার কাছ থেকে ১৮ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। ১৯৪৭ এর দেশভাগের পর যেসব মানুষ ‘মোহাজেব’ হিসেবে এদেশে চলে আসেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০০ মোহাজেবের পরিবর্তে তখন মাত্র ছয়জনকে পুনর্বাসন করা হয়।
এদের মধ্যে শামসুন নাহারের স্বামী ইয়াদ উদ্দিন আহম্মেদও জমি পান। তিনি একাই পেয়েছেন সাড়ে ৬ কাঠারও বেশি জমি। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইয়াদ উদ্দিনকে জমির সেলস অ্যান্ড এগ্রিমেন্ট দলিল করে দেন। ইয়াদ উদ্দিন শর্ত লঙ্ঘন করে ২০০২ সালে সেই জমি আবার তার স্ত্রীর নামে দলিল করে দেন। স্বামীর মৃত্যুর পর এখন শামসুন নাহার সেই জমিতে ডেভলপারের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করছেন।
আনোয়ারুল করিম মুন্না বলেন, দেশভাগের সময় ইয়াদ উদ্দিন এ দেশে আসেননি। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। তবুও তিনি মোহাজেব হিসেবে জমি পাওয়ায় তার বাবা ফজলুল করিম ১৯৮১ সালে জমি ফেরত নেয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অসহযোগিতার কারণে তিনি জমি ফেরত পাননি। হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন করলেও জমির দখলদাররা তার আইনজীবীকে প্রভাবিত করেছেন। ফলে সেই রীটের শুনানি হয়নি। তিনি ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে চান। এরইমধ্যে জমিতে ভবন গড়ে তুলছেন শামসুন নাহার। মুন্না এই ভবন নির্মাণ বন্ধ করে ওয়ারিশদের জমি ফেরত দেয়ার জন্য দাবি জানান।