কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট আলেমদের সাথে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) মতবিনিময়সভা করেছে। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শীত মৌসুমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাব্য সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় করনীয় নির্ধারণ এবং বৃহৎ জনসমাবেশ পরিহার করার লক্ষে আলেম ওলামাদের সাথে আয়োজিত মতবিণিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ হাবেজ আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ শারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম বার। অতিথি আলোচক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যডভোকেট এম এ আফজল, যুগ্ন সম্পাদক পিপি অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শামসুল ইসলাম খান মাসুম। আলেমদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের খতীব মাও. শামসুল ইসলাম, ফাতেমাতুয জোহরা কওমী মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাও. মোহাম্মদ উল্লাহ জামী, মাও. শামসুল হুদা,মাও. মকবুল হোসাইনসহ জেলার বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামগণ। এ সময় জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, ইফার কর্মকর্তাগণ, রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মসজিদের ইমাম খতীবগণসহ উলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের দেশও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ও জনগণ চরম উদ্বিগ্ন। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, রোগ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। বরং নবীজী সা:-এর সুন্নত।
মসজিদের ব্যাপারে বলা হয়, মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে অর্থাৎ যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, যাদের সর্দি, জ¦র, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে, যারা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন, যারা ওই রূপ মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন, যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু, যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত তারা মসজিদে যাবেন না। আর যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অবকাশ আছে। যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা সবাই যাবতীয় সুরক্ষাব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওযু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনা মেনে চলবেন। হঠাৎ হাঁচি-কাশি এসে গেলে টিসু বা বাহু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন।
খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটির করণীয় হিসেবে বলা হয়Ñ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা, জামাত সংক্ষিপ্ত করা, জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা, বর্তমান সঙ্কটকালে ওয়াজ মাহফিল স্থগিত রাখা, ওজুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিসু রাখা, বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো, ইশরাক, তিলাওয়াত, জিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা।