২৪ মাসের প্রকল্প ৩৪ মাস হতে চললেও শেষ হয়নি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারায় ১৩২/৩৩ কেভি (১৫০ মেগাওয়াট) ক্ষমতা সম্পূর্ণ গ্রীড উপকেন্দ্র (সাব স্টেশন)'র নির্মান কাজ। এতে করে সহ-সাই দূর হচ্ছে না জেলাবাসীর বিদ্যুৎ ভোগান্তি।
রাজবাড়ী জেলার বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে কাজ শুরু হলেও নিদ্দিষ্ট দুই বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পেরে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় কাজের মেয়াদ বর্ধিত করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বাংলাদেশ। দ্রুত কাজটি সম্পূর্ণ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর দাবি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণের। অপরদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও প্রকল্পে দ্বায়িত্বরত প্রকৌশলী বলছেন, করোনার কারণে কাজ বাঁধা গ্রস্থ হয়েছে। যে কারণে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং নতুন বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই কাজ সম্পূর্ণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন গ্রীড উপকেন্দ্র (সাব স্টেশন)টি।
রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলায় ওজোপাডিকো লিমিটেড ও পল্লী বিদ্যৎ সমিতির ৫০ থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায় প্রতিষ্ঠান দুটি। এ ছাড়া ফরিদপুর থেকে সাপ্লাইকৃত বিদ্যুৎ দীর্ঘ ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে রাজবাড়ীতে এসে কমে যায় ভোল্টেজের মান এবং সামান্য ঝড় বৃষ্টিতে থাকে না বিদ্যুৎ। ফলে অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যাঘাত ও শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাসহ সর্বস্তরের জনগণ পড়ছেন ভোগান্তিতে।
জানাগেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারায় ৫ একর জমির ওপর ৭৫ কোটি টাকা ব্যায়ে শুরু হয় ১৩২/৩৩ কেভি (১৫০ মেগাওয়াট) ক্ষমতা সম্পন্ন গ্রীড উপকেন্দ্র (সাব স্টেশন)'র নির্মান কাজ এবং কাজটি বাস্তবায়নের দ্বায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বাংলাদেশ। দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ। তবে করোনা ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের কারণে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি বলে দাবী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। যে কারণে তারা দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের জনু পর্যন্ত বর্ধিত করেছে কাজের মেয়াদ।
শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সাধারন জনগণ বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া এখন চলা প্রায় অসম্ভব। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে যেন মনে হয়, কী যেন নাই। বিদ্যুৎ না থাকলে পড়াশুনাসহ ব্যবসায়ীক কাজ-কর্মসহ সকল কাজ বাঁধাগ্রস্থ হয়। বিদ্যুৎ থাকলে শুধু যে আলো কাজে লাগে তা নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন, কাজের গতিও বাড়ায়। তাই দ্রুত রাজবাড়ীর বাগমাড়ায় নির্মানধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর দাবি তাদের। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে, রাজবাড়ীতে আর বিদ্যুতের সমস্যা থাককে না এবং সবাই এর সুফল ও শতভাগ বিদ্যুৎ পাবেন। এদিকে সামান্য ঝড় বৃষ্টিতে থাকেনা বিদ্যুৎ। তাই নিজেদের জেলায় বিদ্যুৎ স্টেশন থাকলে আর সেখান থেকে বিদ্যুৎ তারা পেলে তাদের কোন ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
সাব স্টেশনের নির্মান কাজের ফোরম্যান তারিকুল ইসলাম বলেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং দ্রুত কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান। ১৮ জন শ্রমিক নিয়ে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী ওজোপাডিকো লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে নির্মানধীন ১৩২/৩৩ গ্রীড উপকেন্দ্র সময় মত নির্মান হলে জেলায় বিদ্যুতের সমস্যা থাকতো না। রাজবাড়ীর পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ ফরিদপুর থেকে আসে। যার দুরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এই দুরত্বের কারণে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় বেশি সমস্যা হয়। জেলায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৫০ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎটা যদি রাজবাড়ী থেকে পাওয়া যেত, তাহলে ভোল্টেজের মান ভাল ও বিদ্যুতের কোন সমস্যা থাকতো না। দ্রুত গ্রীড উপকেন্দ্রের কাজ শেষ হলে রাজবাড়ীবাসী বিদ্যুতে সকল ধরনের সুবিধা পাবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বাংলাদেশের সাইড ম্যানাজার মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, এটি ১৩২/৩৩ কেভি পিআইএস সাব স্টেশন। ২০১৮ সালের জুন মাসে দুই বছর মেয়াদী এ প্রজেক্ট তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং কাজের মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপর করোনার কারণে কাজটি পিছিয়ে গেছে। পরবর্তীতে তারা কাজের সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করেছেন। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। বাঁকী কাজ নিদ্দিষ্ট সময়ে আগেই শেষ করবেন। এখানে প্রায় সব বিদেশী মালামাল এবং বিদেশী বিশেষজ্ঞরা কাজটি সম্পূর্ণ করবে। মালামাল প্রায় ৮০ শতাংশ চলে এসেছে এবং বিদেশীরা নভেম্বরের মধ্যে আসলে মুল কাজ শুরু হলে অল্প দিনেই কাজ শেষ হবে।
পশ্চিম অঞ্চলিয় গ্রীড নেটওয়ার্ক ডেবলাপমেন্ট প্রজেক্ট (পিজিসিবি)'র প্রতিনিধি উপ-সহকারী প্রকৌশলী সঞ্জয় কুমার পাল বলেন, পিজিসিবি'র দ্বায়িত্বরত প্রকৌশলীর দাবী করোনা ভাইরাসের কারণে গ্রীড উপকেন্দ্রের কাজে দেরি হয়েছে। তানাহলে এতোদিন কাজ শেষ হয়ে যেতো। এ ছাড়া বাইরের বিশেষজ্ঞারা আসলে কাজ দ্রুত গতিতে সম্পর্ণ করবেন। এটি ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পূর্ণ। উপকেন্দ্রটি হলে রাজবাড়ী জেলা বাসীর বিদ্যুতের কোন সমস্যা থাকবে না।