একযুগ আগে একটি নির্মাণাধীন ব্রিজের নির্মাণ কাজের অনিয়ম দুর্নীতির খবর তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করি। এতে ব্রিজটির নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দূর্গা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শ্রী শ্যামল চন্দ্র সাহা আমার ওপর বেঁকে বসে। অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশের দায়ে আমাকে শায়েস্তা করতে নানাবিধ ফিকির-ফন্দি আঁটতে থাকে ঠিকাদার শ্যামল চন্দ্র সাহা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এক পর্যায়ে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ৩ লাখ টাকার চাঁদা দাবিসহ ব্রিজটির নির্মাণসামগ্রী লুটতরাজের ডাহা মিথ্যা অভিযোগ তুলে গত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল থানায় মামলা করে। তথ্য প্রমাণ ছাড়াই অতিউৎসাহি হয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ওইদিন বিকালে ১৮ জনের পুলিশের একটি দল আমাকে গ্রেফতার করে। ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য দিয়ে আমাকে সহায়তার সন্দেহে ব্রিজ এলাকার ১২ জনকে মামলায় আসামি করা হয়। ১৯ দিন পর ১৪ মে জামিনে আমার কারাজীবনের অবসান হয়।
ওই মামলায় গত ২৬ নভেম্বর আদালপাড়ায় ৬ ঘণ্টাব্যপী দেখতে হলো সত্যখেকোদের উলঙ্গ নৃত্য। আসামি হওয়ার অযুহাতে কারাদ-ের ভীতি প্রদর্শন করে পাবলিক প্রসিকিউটর, প্রেশকার এবং দপ্তরি-মহুরী পর্যন্ত স্বার্থোদ্ধারে হেনেস্তার যে ফাঁদ পেতে ছিলো, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারোর বুঝবার নয়। অপদাপটে মনে হয়েছে, আদালতপাড়ায় মানুষ নামে ওইসব অমানুষরা সত্যি যেনো বিষধর সর্প! কেবলমাত্র তারা ছুঁ মারলেই কারাঅভ্যন্তরে যেতে হবে প্রতিবাদিদের। ফলে অনন্তকাল টানতে হবে কারাদ-ের বোঝা। একমাত্র বিচারক ছাড়া আদালত সংশ্লিষ্টদের কার্যকলাপে মনে হয়েছে, তাদের ঘুষবাণিজ্য আর হীনকাজ যেনো অপ্রতিরোদ্ধ! খোদ আদালতপাড়ায় বিচারের নামে অবিচারের শিকার হয়েও এগিয়ে যাওয়ার ডিজিটাল বাংলায় মজলুমের আফসোস করা ছাড়া বৈকি? তাছাড়া আদালতপাড়ার দুর্নীতিবাজদের নিয়ে মুখ খোলে কেউ আইনের প্যাচে নতুন করে পা দিতে চান না। একারণেই আদালতপাড়ার দুর্নীতিবাজদের অনেক খবরই অন্ধকারে গোমরে মরে। ফলশ্রুতিতে অজপাড়ার গ্রাম পুলিশ থেকে শুরু করে মেম্বার-চেয়ারম্যান ভায়া আইনপ্রণেতা হয়ে গণতন্ত্রের ক্লাব খ্যাত জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত অনিয়ম-দুর্নীতির খবরা-খবর গণমাধ্যমে কমবেশী বেরিয়ে এলেও আদালতপাড়ার অনিয়ম-দুর্নীতির অহরহ ঘটনায় অগণিত বিচারপ্রার্থী নিষ্পেষিতের পরও তা চাউর হয় না। মামলায় উল্লেখিত স্বাক্ষীদের আদালতে স্বাক্ষ্যগ্রহণ করা পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব। কিন্তু আপনি অনন্ত একবার গিয়ে তা দেখুন। সেখানে কী নিদারুণাবস্থা। কতটাই না আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এতে বাদ পড়বে না আসামি পক্ষ্যও।
আদালতপাড়ায় ভোগতে হয়েছে নিদারুণ যন্ত্রণা। ব্রিজ নির্মাণে দুর্নীতির প্রায় খবরগুলোই প্রকাশ হয়েছে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের অনেক দিন আগে। ব্রিজ নির্মাণে রডের পরিবর্তে আশি ফুট বাঁশের খাঁচা পাইলে বসানোর খবর পত্রিকার কার্টিংয়ে থাকলেও এসবের যেনো পাত্তা নেই আদালতপাড়ায়। বরং দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের কথায় যেমন উঠবস করেছে আজ থেকে বারো বছর আগে জনগণের সেবক নামের আইনের রক্ষকের আদলে তদন্ত কর্মকর্তা ‘শ’। এখন ঠিক তেমনই স্বার্থোদ্ধারে নগ্ন নৃত্যে বেসামাল আইনের ধারক নামের পাবলিক প্রসিকিউটরের আদলে যেনো পাবলিক পাপি! বিপরীতে বস্তু নিষ্ঠু সাংবাদিকতার দায়ে চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এখন দেখি আর নিস্তার নেই বুঝি। মনগড়া স্বাক্ষীর জবানবন্দিতেই সাংবাদিকতায় এবার হয়তো দ-ের মুখোমুখি হয়ে কারাঅভ্যন্তরে দিনাতিপাত করতে লাগতে পারে। কারণ আদালতে স্বাক্ষীরা চোখ বন্ধ করে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিতে কম করেনি। স্বাক্ষ্য দেয়ার আগে যদিও খোদ আদালত কক্ষে ঠিকাদার শ্যামল চন্দ্র সাহা ও তার মানিত স্বাক্ষীরা আমার ক্ষতি হবে এমন কোনো তথ্য আদালতে উপস্থাপন করবে না, মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেনি। ঠিকাদার শ্যামল চন্দ্র সাহা হাস্যোজ্জ্বল মুখে আমাকে বলেছিলো আমি যেনো পিপি সাহেবের সাথে পরামর্শ করে মামলাটি শেষ করার ব্যবস্থা করি। তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। সেকারণেই মামলা আর চালাবে না। স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়ে আমাকে জেলে পুরতে মনগড়া স্বাক্ষী দেয় ব্রিজখেকো শ্যামল চন্দ্র সাহা। সেদিন থেকে মামলাটি মুল স্বাক্ষীপ্রাপ্ত। এখন মামলা দ্রুত এগিয়ে যাবে রায় ঘোষণায়। রায়ে কারাদ-ে দ-িত হতে হবে নাকি বেকসুর খালাস পাবো, সেটা মহান আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
বিচারের নামে অবিচারকদের কারসাজিতে আজ সাংবাদিকতার দায়ে আদালত দ- দিলেও আমি বারংবার ওই সাংবাদিকতায় খোঁজে মরবো বাসযোগ্য পৃথিবী। প্রস্বস্থ ভূপৃষ্টে ক্লান্ত মৃদু দুপুরে শান্ত ঘুঘুর ডাক শোনার জন্য রোজ অপেক্ষায় থাকবো জানলার কার্ণিশে বসে। ক্ষমতার দাম্ভিকতায় কিংবা মিথ্যা অভিযোগে মামলায় সাংবাদিকতার দায়ে আসামি হয়েছি, তা ব্যর্থতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে না নিয়ে ওই হিসেব আমি সাংবাদিকতায় মিলিয়ে নেবো। তাইতো বারংবার সাংবাদিকতায় শুকুনদের সাথে দেখা হলেও বাকবিত-তায় না জড়িয়ে সাংবাদিকতার ঝা-ায় সত্য হাসবে বলে যতœ করে দুর্নীতিবাজদের প্রতিচ্ছবির তথ্যাদিসহ সম্ভাবনা তুলি ধরি জাতির আয়না খ্যাত গণমাধ্যমে।
অসত্যের অপদাপটে নিষ্পেষিত হয়েও অশ্রুসিক্ত নয়নে নয়। বরং অপলক দৃষ্টিতে তথ্যের শক্তিতে কলম ধরি সত্যের পক্ষে। এগিয়ে চলি তথ্যের আস্থায়। আজ বর্বরতার বিরুদ্ধে মানবতার লড়াই। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ে বিজয় নিয়ে জীবন গড়তে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। হৃদয়ে লালন করি, বাস্তবতা এতই কঠিন যে, কখনো কখনো মুখোসধারীদের কারসাজিতে কঠিন সত্যও অসহায়ত্ব বরণ করে। বস্তু নিষ্ঠু সাংবাদিকতার বিপরীতে আমাকে হেনেস্তা করতে আর দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের অর্থ হাতিয়ে নিতে বেপরোয়ায় বেসামাল ছিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম স¤্রাট। ফলশ্রুতিতে মামলার বাদির চেয়েও কয়েক ধাপ হিংসাক্তমনে আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, ‘আমি নাকি অসত্য তথ্যাদি পত্রিকায় প্রকাশ করে মামলার বাদিকে সাংবাদিকতার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে আসতে ছিলাম। এবং সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। উক্ত ব্রিজটি নির্মাণকালে ওই এলাকায় আরো ৩/৪টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ওইসব ব্রিজ নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো বিবৃতি সংবাদপত্রে প্রকাশ করি নেই। কারণ ওই সময় চাঁদাগ্রহণের সুযোগ ছিলনা বলে আমার কলম নীরব ছিল।’
ঈমানে বলছি, ওইসব অভিযোগে আমি বিন্দুমাত্রও অভিযুক্ত নই। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা কি বলতে পারবে ‘তিনি টাকা ছাড়া’ আমাকে গ্রেফতার করেছিল? সে যদি তার ঔরসজাত সন্তানের মাথায় হাত রেখে আজও সেটা বলতে পারে। তবে ওয়াদা দিচ্ছি ‘আমি আর যাই হয়না কেনো, কিন্তু মানুষ নয়।’
অবস্থা এমন যে, মানুষ নামে অমানুষরা যেনো এক আত্মাহীন, বিবেকহীন, সত্যহীন, বাস্তবাদীহীন, বস্তুবাদী সভ্যতার কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করেছে। সর্বত্র মিথ্যার জয়জয়কার। সত্যের লেশমাত্রও নেই। এখানকার সমাজে সত্য মিথ্যার দ্বন্ধে যেনো সত্য শতভাগ পরাজিত। পুঁজিবাদী অর্থনীতির জটিল হিসাব নিকাশ দিয়ে বুভূক্ষু কৃষক শ্রমিক জনতার অর্থ পাচার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবু মানবজাতি মোহাবিষ্ট হয়ে আগুনের অভিমুখে পতঙ্গের মতো চাকচিক্যময় ভোগবাদী বস্তুবাদী সভ্যতার পিছনে অবিরাম ছুটছে।
সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্ব কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। থাকবে ষড়যন্ত্রও। এর মধ্যেই লড়াই করে বাঁচতে হবে। কিছু স্বার্থপর লোক সমাজ, দল ও রাষ্ট্রে নেতৃত্বে থাকবেই তারপরও এগিয়ে যেতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা করে। নিন্দুকেরা নিন্দা, হিংসুকেরা হিংসা, খুনিরা খুন, ঘুষখোরেরা ঘুষ, ধর্ষণকারীরা ধর্ষণ, ইসলামের শশ্রুরা শত্রুতা করবেই। এতে কিছু শেল্টার দাতারা শেল্টার দিয়েই যাবে। তাই বলে কি এসবের বিরুদ্ধে হেনেস্তার ভয়ে চুপসে যাবো? না তা মোটেও নয়। একবার নয়, দুইবারও নয়। বরং বারবার সাংবাদিকতায় দায়ে মিথ্যা অভিযোগে হেনেস্তার শিকার হলেও ওই সাংবাদিকতাতেই নিয়মের পথ বাদলাতে আর মুখোসধারীদের মুখোস খুলতে প্রতিনিয়ত সোচ্চার হবো ইনশাল্লাহ।
‘দশআনী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে খবর প্রকাশ হয় পল্লীকণ্ঠ প্রতিদিন এবং সচেতনকণ্ঠ পত্রিকায়। একই দিন ‘দশআনী নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রিজের নির্মাণ কাজে ফের অনিয়ম-দুর্নীতি’ শিরোনামে খবর ছাপা হয় আজকের জামালপুর ও জামালপুর সংবাদ পত্রিকায়। দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায় ‘দশআনী ব্রিজে ফাটল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা’ শিরোনামে খবর ছাপা হয়। ‘সোয়া ২ কোটি টাকায় নির্মিত ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধসে পড়ছে’ শিরোনামে খবর বের হয় আমার দেশ পত্রিকায়। এছাড়া ‘নির্মাণের এক মাসের মধ্যেই ফাটল, আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দশআনী ব্রিজের ব্লক ধসে পড়েছে’ শিরোনামে খবর ছাপে দৈনিক সংগ্রাম।
উল্লেখ, ২০০৬ সালে ব্রিজ নির্মাণের শুরুতেই সমকাল পত্রিকায় ‘ব্রিজের নির্মাণ কাজে অনিয়মের বাধা দেয়ায় ১০ গ্রামবাসী আহত’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। এরপর ২০০৭ সালে ৪ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক উর্মিবাংলায় ‘দশআনী নদীর উপর পুনরায় ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু’ শিরোনামের খবরে ব্রিজটির নির্মাণ কাজের নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরা হয়।
ওই ব্রিজটির নির্মাণ কাজের দুর্নীতির খবরের প্রতিবেদকদের অনেকেই আজ সাংবাদিকতায় উচ্চ আসনে যেমন আসীন। তেমনই ব্রিজটির নির্মাণ কাজে যারা ঠিকাদারকে অনিয়ম-দুর্নীতির সহায়তা দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে বেপোয়ারায় বেসামাল ছিলো, তারাও আজ বিভিন্ন মর্যাদার দাবিদার। দৈনিক সাপ্তাহিক উর্মিবাংলার সম্পাদক ও ডেসটিনি পত্রিকার প্রতিবেদক শাহিদুর রহমান শাহিদ সাহেব বর্তমানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের আসনে আসীন। আনোয়ার হোসেন মিন্টু সমকাল ছাড়াও নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার পদে আসীন।
আমার দেশ পত্রিকার প্রতিবেদক ওসমান হারুনী মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি পদে কর্মরত। নারী কেলেঙ্কারি এবং অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে একাধিকবার জেলহাজতে গিয়েও দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার শ্যামল চন্দ্র সাহা ইতোমধ্যে সিআপি মর্যাদায় ভূষিত। ব্রিজ নির্মাণে দুর্নীতির মূলহোতা তৎকালীন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম পদন্নোতির সুযোগে উপরির টাকায় বড় বড় শহরের একাধিক সুরম্য ভবনের মালিক বনে গেছে। ওয়ার্ক এ্যাসিস্টেন্ট খলিলুর রহমান ও মামুন শহরে বাসাবাড়ির মালিক। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম স¤্রাট এসআই থেকে পদন্নোতি পেয়ে পুনরায় ওই থানার প্রধানকর্তা ওসি পদে আসীন। ঘটনার আদিঅন্ত শুনে স¤্রাটের ইউপি চেয়ারম্যান বাবা আমার শিক্ষক বাবাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন ‘আমাকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। যদি তা না দেয়া হয়, তবে স¤্রাট তার ছেলেই নয়।’ কিন্তু ওমন শক্ত কথাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চার্জশিটের পর আমি থানা চত্বরে স¤্রাটকে বলেছিলাম, ‘আপনার বাবা আমার বাবাকে যে ওয়াদা দিয়েছিল, তা আপনি রাখেননি। এখন ভেবে দেখুন আপনি কার ছেলে?
ব্রিজটির নির্মাণ কাজের দুর্নীতির খবর লেখার দায়ে শুধু আমাকেই উচ্চ আসন পেয়েও তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয়েছে। একযুগ ধরে কাঁধে বহন করতে হচ্ছে মালবাজ ঠিকাদারের দায়েরকৃত মামলার গ্লানি। মামলাভারে সংবাদের সহ-সম্পাদক পদটিও আমার কপালে বেশী দিন টিকেনি। শেষঅবধি আদালতের রায়ে দ-ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায়। সবমিলে ডাহা মিথ্যা অভিযোগের মামলায় আমাকে ব্যাক গিয়ারে চলতে হচ্ছে। এখন সাংবাদিকতায় কলম ধরে ভাবি, এরই নাম নিয়তি! এরই নাম বিচার!! এরই নাম রাষ্ট্র!!!
অবিচার কিংবা শোষণ-নিপীড়নের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে আমি কখনোই চিরন্তন সত্যকে ভুলে যেতে চাই না। অস্তমিত সূর্যটা ভোরবেলা যেমন উদয় হয়। তেমনই ভোরের সূর্য সময় হলেই অস্ত যাবে, এটাই আমার অতিস্বাভাবিক ধারণা। তেমনই ধারণা, সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ে। সত্যের বিজয় অনিবার্য। সেকারণেই সাংবাদিকতায় নীতির হার, এমনটি মেনে নিতে পারি না।
আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যতটুকু অংশ দেখা যায়, সেটাই আমার স্বপ্নের পৃথিবী। রিজিক আমার নির্ধারিত। আমার রিজিক অন্য কাউকে দেয়া হবে না। কারাগারের রুটি-গুড় যদি রিজিক থাকে, সেটা আমাকে অবশ্যই খেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, সৎকর্মে যা কিছু জুটে, সেটাই আমার নিয়তি। সুস্থ্য চিন্তাই আমার স্বপ্ন। সৎকর্মই আমার স্বর্গ।
ঈমানে বলছি, বস্তু নিষ্ঠু সাংবাদিকতার দায়ে নির্যাতনে পাজর ভাংগার পরেও নিরাশ হয়নি হক্কের হাকিম দুনিয়ার মালিক সৃষ্টিকর্তার রহমতের। সৃষ্টিকর্তার নিকট আকুল আবেদন ন্যায় বিচারের। নিশ্চয় মহান আল্লাহ তায়ালা মজলুমের ফরিয়াদ কবুল করবেন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)