সাগরের বুক চিরে সূর্যের লাল আভা উঁকি দিতেই জড়ো হয় শত শত রাসভক্ত নারনারী। সবার দৃষ্টি পুব আকাশে। সূর্যের উঁকি দিতেই উলুধ্বনিতে সরগম গোটা সৈকত। রাসভক্ত পুণ্যার্থীরা কেউ পূজা করছেন। কেউবা স্নানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সোমবার প্রত্যুষে কুয়াকাটার বেলাভূমের এমন দৃশ্য ছিল পূণ্যার্থীর মিলনমেলায়।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা ও রাসভক্ত পূণ্যার্থীর সমাগমের মধ্য দিয়ে শত বছরের সাগরপাড়ের কলাপাড়ায় ঐতিহ্যবাহী রাস পূজা শুরু হয়েছে। রোববার শেষ বিকেল থেকে কুয়াকাটায় রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে সমবেত হয়েছেন শত শত রাসভক্ত পূণ্যার্থী। সোমবার প্রত্যুষে সাগরে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সেখানকার অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হবে। ওইদিন বিকেল থেকে উপজেলা সদর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রমে ধর্মীয় উৎসবে মিলিত হবেন রাসভক্ত পূণ্যার্থীরা। সেবাশ্রমে স্থাপন করা রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন ছাড়াও ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন আগতরা। সেবাশ্রম অঙ্গনে ক্ষুদ্র পরিসরে দোকানপাট বসেছে। প্রশাসন রাসমেলার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে অনুষ্ঠানমালায় কাটছাট করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহারে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। কুয়াকাটা এবং কলাপাড়ায় রাস পূর্ণিমায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উপজেলা প্রশাসন ও রাস পূর্ণিমার পূজা উদযাপন কমিটি এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। কলাপাড়ায় মদনমোহন সেবাশ্রমে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস পুর্ণিমার উৎসবে কিছুটা হলেও ধারাবাহিকতার ছেদ পড়েছে করোনার কারণে। করোনার সংক্রমন ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহারে প্রশাসন কঠোরভাবে আগেভাগেই কাজ করে যাচ্ছে। তবে রাস পূর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগরে পূণ্যস্নানে আসা পূণ্যার্থীদের জন্য সকল ধরনের নিরাপত্তার প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, আগত দর্শনার্থী কিংবা পূণ্যার্থীরা শুধুমাত্র পূজা ও পূণ্যস্নানের স্থানে প্রবেশে করতে পারবেন। রাস পুর্ণিমা উপলক্ষ্যে কোন ধরনের মেলার আয়োজন করা যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্দির এলাকা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আগত রাসভক্তদের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য অস্থায়ী লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। পূণ্যার্থীর নির্বিঘœ চলাচলের জন্য বাস, মোটরসাইকেলসহ সকল যানবাহন নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিংএর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুয়াকাটার প্রবেশপথে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু স্কুল থেকে কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত সড়ক সম্পুর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল, টমটম, অটোরিক্সায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মনিটরিংএর ব্যবস্থা থাকছে। কলাপাড়া পৌরশহরের মদন মোহন সেবাশ্রম এলাকায় রাসপূজা চলাকালীন সড়কে চলাচল ওয়ান ওয়ে রাখা হয়েছে। আগতদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবার জন্য থাকছে মেডিকেল টিম। রাসভক্ত নারীরা পূণ্যস্নান শেষে যেন শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরিবর্তন করতে পারেন এজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পূণ্যস্নানের সময় সকল ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্ধারকারী দল থাকছে। বখাটেপনা ও মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন বন্ধে একাধিক মোবাইল কোর্ট থাকছে। কুয়াকাটা সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শান্তিপুর্ণভাবে রাস উৎসব ও পূণ্যস্নান নিরাপদ করতে বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাসেবী দল প্রশাসনকে সহায়তা করবে। এমনকি করোনাবিধি মানতে আগত পূণ্যার্থীদের মাস্ক বিতরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাস্ক ব্যতীত কাউকে পূজা মন্ডবে কিংবা ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ রাস পূর্ণিমার উৎসব পূণ্যস্নান ও ধর্মীয় রীতি পালনে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে রাসপূজা উৎযাপন কমিটি এবং কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে কলাপাড়ায় এবং কুয়াকাটায় রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। হিন্দু সনাতন ধর্মের অনুসারিদের বিশ^াসমতে শতবছরের এ পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সারা বছররের পঙ্কিলতা দূর করে নতুন দিনের যাত্রা শুরু করবেন তাঁরা। ফি বছরের মতো কার্তিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে হাজার হাজার রাসভক্ত কুয়াকাটায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিলিত হন। করবেন সাগরে পূণ্যস্নান। সোমবার বিকেল থেকে কলাপাড়া পৌরশহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে মিলিত হবেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। দর্শন করবেন রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা।