সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), ফরিদপুর এবং ডাল গবেষণা উপকেন্দ্র, বারি, গাজীপুর এর আয়োজনে খেসারী, মাসকলাই, ফেলনের জাত উন্নয়ন, বীজ উৎপাদন এবং সংগ্রহত্তোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিস্তার কর্মসূচী’র অর্থায়নে সরেজমিন গবেষণা’র আওতায় ফরিদপুর সদরের কুজুরদিয়া গ্রামে বিনা চাষে বারি মাস-৩ উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস এর সঞ্চালনায় মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বারি, বরিশালের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রফি উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুর অঞ্চল, ফরিদপুরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রিফাতুল হোসাইন।
মাঠ দিবসে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র, মাদারীপুর এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ছালেহ উদ্দিন, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ফরিদপুর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ।
অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের কৃষিতে ডাল ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, দারিদ্র বিমোচন ও পুষ্টিহীনতায় ভোগা বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। ডালফসলে আমিষের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০%। এজন্য ডালকে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মাসকলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ আমিষ সমৃদ্ধ সুপাচ্য খাদ্য উপাদান। বাংলাদেশে প্রচলিত ডাল ফসলের মধ্যে মাসকলাইয়ের স্থান চতুর্থ। দেশে মোট উৎপাদিত ডালের ১০-১১% আসে মাসকলাই থেকে। দেশে মাসকলাইয়ের মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৬৮ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন প্রায় ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। ফরিদপুরে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে মাসকলাই’র আবাদ হয়ে থাকে এবং ফলন প্রায় ১.১ টন/হেক্টর বা শতকে প্রায় ৪.৫ কেজি। সাধারণত ফরিদপুরের চর এলাকায় বর্ষার পর অর্থাৎ খরিফ-২ মৌসুমে জমির পানি সরে যাওয়ার পর পলি অঞ্চলে বিনা চাষে মাসকলাই চাষ করা হয়। তবে এ বছর বন্যা ও বর্ষার পানি নামতে দেরী হওয়ার কারণে আমন ধানের আবাদ বেশকিছু সমতল এলাকায় ব্যাহত হওয়ায় ঐসব পতিত এলাকায় বিনা চাষে মাসকলাই’র আবাদ করা হয়েছে। বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত মাসকলাই এর জাত ও প্রযুক্তিসমূহ মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ প্রয়োজন এবং এরই প্রেক্ষাপটে কুজুরদিয়া এলাকায় ১.৫ একরে বারি মাস-৩ এর উৎপাদন কর্মসূচীর ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে ডাল ফসলের আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর যা মোট আবাদি জমির শতকরা ১২ ভাগ এবং উৎপাদিত ডালের পরিমান ১০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন একজন মানুষের ৪০-৪৫ গ্রাম ডাল খাওয়া উচিত, সে তুলনায় আমরা ভক্ষণকরি মাত্র ১৭ গ্রাম। অপর্যাপ্ত উৎপাদনের জন্য এদেশের জনগণের মাথাপিছু দৈনিক ডালের প্রাপ্যতা খুবই কম। কৃষকদের বারি উদ্ভাবিত ডালের নতুন জাত ও প্রযুক্তি দ্বারা ডাল ফসল আবাদের জন্য প্রধান অতিথি অনুরোধ করেন। কৃষকেরা সাধারণত স্থানীয় জাতের মাসকলাই’র আবাদ করে থাকে যার ফলন কম এবং রোগ ও পোকামাকড়ের পরিমাণ বেশী। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মাস-৩ (হেমন্ত) জাতটির ফলন শতকে প্রায় ৬ কেজি যার দ্বারা বারি উদ্ভাবিত এ জাতসমূহ কৃষক পর্যায়ে আবাদ করে দেশে ডালেরঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। তিনি সবাইকে নতুন প্রযুক্তি গ্রহন করে মাসকলাইর উৎপাদনকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানটিকে আরও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক সহকারী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মী। মাঠ দিবসে অনুষ্ঠানে মোট ৫০ জন কৃষক ও কিষাণী অংশগ্রহণ করেন এবং বারি উদ্ভাবিত বারি মাস-৩ এর প্রায় ১৫০ শতক প্লটের উৎপাদন কার্যক্রম প্লট পরিদর্শণ করেন। তারাঁ প্রচলিত জাতের মাধ্যমে কম ফলনশীল মাসকলাই এর পরিবর্তে বারি উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিকে গ্রহন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।