আজ ৪ ঠা ডিসেম্বর, লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোসর, রাজাকার, আল-বদও,জামায়াতের সহায়তায় লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ,লুটপাট, ধর্ষণ শেষে হাজার হাজার নিরীহ জনসাধারনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। এ উপলক্ষ্যে শুক্রবার লক্ষ্মীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে জেলা শহরের সামাদ উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে র্যালি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। আমরা ক’জন মুজিব সেনার ব্যানারে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা এ এফ জসীম উদ্দিন আহমদ, সংগঠনের জেলা সদস্য সভা পরিচালনা কারী কুবি মুজতবা আল মামুন, মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, বসির আহমদ।
সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ ৭১ এর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে অবিলম্বে এলাকাভিত্তিক পাকিস্তাদের দোসর রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসরদের তালিকা প্রণয়েনের দাবী জানানো হয়। একইসঙ্গে ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে চক্রান্ত কারীদের হুশিয়ারি করে দেন তারা। এর আগে র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন শ্লোগান মুখরিত ছিল।
জানা যায়, ৭১ এর এ দিনে পাকহানাদার মুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর। যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯টি সম্মুখযুদ্ধ ও ২৯টি দু:সাহসিক অভিযান পরিচালিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এ দিন শহরের বাগবাড়ীতে হামলা চালিয়ে রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ জেলায় ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন শহীদ হন। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যস্যসহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটি।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সুত্রে জানাযায়, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে লক্ষ্মীপুরে মুক্তিবাহিনীর ১৭টি সম্মুখযুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান হয়েছিল। তখনকার সময়ে এসব যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল হালীম বাসু, মনছুর আহমদ, আবু ছায়েদ সহ ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকহানাদার বাহিনীর হাতে জানা-অজানা কয়েক শত নর-নারী নিহত হন। পাক-হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়। আজও এর স্মৃতি হিসেবে ব্রীজের লোহার পিলার দাঁড়িয়ে আছে।
৪ঠা ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও সুবেদার প্রয়াত আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্র হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড় সহ বাগবাড়িস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করেন।
এ সময় প্রায় দেড় শতাধিক রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রকাশ্যে লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয় বলে জানায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
এসব নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর,টর্চারসেল, মাদাম ব্রীজ ও বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ বাসুবাজার গনকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি।
সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিক কমান্ডার তোফায়েল আহাম্মেদ জানান,ডিসেম্বরের এ দিন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরীর এবং সুবেদার প্রয়াত আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্র হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার, দক্ষিণ হামছাদী,শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খালপাড়সহ বাগবাড়ীস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করেন এবং প্রায় দেড় শতাধিক রাজাকারকে আটক করে ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন।
প্রকাশ্যে লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাক হানাদার ও এই দেশীয় রাজাকারদের এসব নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, টর্চারসেল, মাদাম ব্রীজ বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ, বাসু বাজার গণকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা এম আলাউদ্দিন জানান, রাজাকার আল-বদররা অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে, হত্যাকান্ডের আজও সে স্মৃতি মনে করে প্রিয়জনদের হারানোর ঘটনায় শিহরে উঠতে হচ্ছে এখনো।