রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের জোকার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জোকার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে ওই প্রকল্পের একাধিক সদস্যকে মারপিট করা সহ বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকী প্রদান করে আসছে। এই ঘটনায় হাট-গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি পুলিশ।
জানাগেছে, জোকার বিল এলাকার পাঁচ গ্রামের জমির মালিকরা ৩ বছর মেয়াদী মৎস্য চাষ করে আসছে। জোকার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পে ৩ হাজার শেয়ার চালু রয়েছে। প্রায় ২ হাজার ব্যক্তির মাঝে এই শেয়ার বন্টন করা হয়েছে।
মাছ চাষকে কেন্দ্র করে এর আগে সাবেক সভাপতি ও ক্যাশিয়ার আনিসুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানায়, মৎস্য চাষ প্রকল্পের কোন হিসাব-নিকাশের বিষয়ে কারো সাথে কথা বলতেন না। বিলের সকল হিসাব-নিকাশ ইচ্ছেমতো নিজের কাছে রাখতেন। জোকার বিলে প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার মাছ বিক্রয় হয়ে থাকে। এত বিপুল পরিমান টাকার হিসাব কোন সদস্যই সঠিক ভাবে জানতে পারতেন না। হিসাব-নিকাশ চাওয়ার জের ধরেই সমিতির অন্য সদস্যদের সাথে তৎকালীন সময়ে বিবাদ সৃষ্টি হওয়ার কারণে নির্মাম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাকে।
পরে প্রশাসনের কড়া হস্তক্ষেপের ফলে মিমাংসার মাধ্যমে আবারও মাছ চাষ শুরু করে জমির মালিকরা। সে সময় নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যার আবদুর রশিদকে সভাপতি করে জোকার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্প মাছ চাষ শুরু করে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে আবদুর রশিদকে সভাপতি করে ৪২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বর্তমানে চলছে জোকার বিলের মাছ বিক্রয়। এরইমধ্যে ৩ বারে টাকা সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়ে গেছে। তবে ওই কমিটির ৯ জন সদস্যকে বাদ দিয়ে। তারা মাছ বিক্রয়ের হিসাব চাওয়ায় তাদেরকে অলিখিত ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরো জানা গেছে, আবদুর রশিদ মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি হয়ে ক্যাশিয়ারের নিকট টাকা না রেখে নিজের কাছেই রাখে। বিপুল পরিমান টাকার কারণে সদস্যরা হিসাব চাই। হিসাব চাওয়ায় নাকি তাদের অপরাধ বলে তাদের দাবী। এরইমধ্যে বাদ দেয়া বেশ কয়েকজন সদস্যকে বিভিন্ন এলাকা থেকে তার হাতুড়ী বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করেছে।
ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া, কাষ্টনাংলা, হাট মাধনগর, পানিয়া এবং গোড়সার গ্রামের লোকজন এই বিলে মাছ চাষ করে আসছে। হিসাব চাওয়ায় বাসুদেবপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, কাষ্টনাংলা গ্রামের বাবুল হোসেন সহ বেশ কয়েক জনকে তুলে নিয়ে মারপিট করেছে সভাপতি সহ তার বাহিনী। কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় না করে এরইমধ্যে বিলের সভাপতি বিলটা দখলে নিতে ২০-৩০ জন লোক দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ড্রেন (নালা) খনন কাজ শুরু করেছে। কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, বাবুল হোসেন, মজনু, সালাম, আহসান সহ অনেক সদস্যকে টাকা পরিশোধ করেননি। তারা বলেন, বিগত বছরের সকল টাকা ঠিক মতো পাওয়া গেছে। এবার শেষ বছর হওয়ায় টাকা ঠিক মতো পরিশেধ না করে গড়িমসি করছে তারা। জোকার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পে ৮ লাখ টাকা রাখা হয়েছে আনিসুর হত্যা মামলার আসামীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে কোন টাকা দেয়া হয় নি প্রকল্পের পক্ষ থেকে। এটা নিয়েও কমিটির সদস্যদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। জোরপূর্বক মাছ করার লক্ষ্যে সভাপতির বিরুদ্ধে হাতুড়ী বাহিনী তৈরির অভিযোগও উঠেছে।
সদস্যদেরকে তাদের অংশের টাকা পরিশোধ করার জন্য সভাপতি সহ কমিটির সদস্য এবং থানার ওসি, মেয়র অনেকেই মিমাংসা বৈঠক করেছে। মিমাংসা বৈঠকে টাকা পরিশোধের কথায় এক মত হলেও এলাকায় গেলে তা আর হয় না। এমন পরিস্থিতে যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্পের যে সকল সদস্যদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি তারা এরইমধ্যে পুলিশের আশ্রয় নেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে হাট-গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, বিলের টাকা পরিশোধ করেনি বলে আমার কাছে লোকজন অভিযোগ করেছে। আমি তাদেরকে বলেছি এতে ধর্য্য হরানোর কিছু নেই সময় মতো টাকা পৌঁছে যাবে।
জোকার বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি শারীরিক অসুস্থ হওয়ায় তাঁর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ক্যাশিয়ার জাহিদুল ইসলাম প্রথমে বলেন সবার টাকা পরিশোধ করা হয়ে গেছে। পরে তিনি আবারও বলেন, সভাপতি বর্তমানে অসুস্থ সুস্থ হলে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে।