১০ ডিসেম্বর মুক্তাগাছা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় মুক্তাগাছা। দিনটি এলাকাবাসীর কাছে একাধারে আনন্দ ও বেদনার। মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তি সেনাদের তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলনে দখলদার পাকহানাদর বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে বর্বর পাকহানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও গণহত্যায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে বিপর্যস্ত হয় মুক্তাগাছার জনপদ। মুক্তিকামী জনতার সকল বাধা অতিক্রম করে পাকবাহিনী ৭১সালের ২৩ এপিল শুক্রবার ১২টার দিকে জিপ ও ট্রাকের এক বিশাল বহর নিয়ে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে দখল করে নেয় মুক্তাগাছা। পাক বাহিনীর লুটতরাজ ও অগ্নি সংযোগের ফলে মুক্তাগাছা পরিণত হয় এক ধ্বংসযজ্ঞ। এ সময় পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন অনেকেই। মুক্তাগাছার ভিন্ন জনপদে শুরু হয় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নি সংযোগ, লুটতরাজ, ধর্ষনসহ ধ্বংস যজ্ঞের। মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক খন্দকার আবদুল মালেক শহীদল্লাহ ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন থেকে ৫০টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নিজ বাড়ী নন্দীবাড়ীতে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করেন। এ সময় তাঁর সহযোগী ছিলেন শিশির রক্ষিত, সুভাষ চন্দ্র রক্ষিত, ফজুলল হক দুদু, আবদুল হাই আকন্দ, হায়তুল্লা ফকির, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রহিম খান বাদশাসহ অনেকেই। ২৯ মার্চ মেজর শফিউল্লাহ (জেনারেল ও সেনাপ্রধান) তাঁর বাহিনীসহ মুক্তাগাছায় এসে মহাবিদ্যলয়ে (শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজ) স্থাপন করেন অস্থায়ী ক্যাম্প। চালু হয় প্রশিক্ষণ শিবির। ২৫০জন তরুণ এখানে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। ১৭ এপ্রিল টাইঙ্গাইল জেলার মুধুপুরে অবস্থানরত অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগদেন এই তরুণরা। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ। এর মধ্যে ভিটিবাড়ী গ্রামে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর যুদ্ধ ছিল সবচাইতে দুঃসাহসিক। অবশেষে ৯ডিসেম্বর দিবাগত রাতের আঁধারে পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় টাঙ্গাইলের পথে। ১০ ডিসেম্বর পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠার সাথে সাথে শহরের চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও হাজার হাজার উল্লাসিত জনতা মুক্তির পতাকা হাতে প্রকম্পিত করে তোলে রাজপথ। দিবসটি পালনে মুক্তাগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তাগাছা পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, মসজিদ-মন্দিরে দোয়া ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহনকরেছে।