সাবেক মন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ (৮১) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বৈশিক মহমারী করোনাজনিত কারণে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তিনি ঢাকার এপেলো নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে তাকে সিসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। দুপুর পৌন ১টার দিকে তার লাইফ সাপর্টটি সরিয়ে ফেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শুক্রবার কামাল ইউসুফের মরদেহ ফরিদপুরে আনা হবে। ওইদিন বিকেল ৩টায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে ময়েজ মঞ্জিলে পারিবারিক কবরাস্থানে তাকে দাফন দেওয়ার কথা।
গত ১৯ নভেম্বর নিউমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন কামাল ইবনে ইউসুফ। ২১ নভেম্বর তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
কামাল ইউসুফ ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে পাঁচ দফা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি যে কয়বার সরকার গঠন করেছেন ততবারই তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭৯ সালে বিএনপি দল গঠনের সূচনা লগ্নেই তিনি এ দলের সাথে যুক্ত হন। ওই বছর দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-৩ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ১৯৯৬, ২০০৮ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
কামাল ইউসুফ স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা মন্ত্রী এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
একটি সমৃদ্ধ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেন কামাল ইউসুফ। তিনি ফরিদপুর শহরের কমলাপুর মহল্লার ময়েজ মঞ্জিলের সন্তান। তার পিতামহ ছিলেন জমিদার চৌধুরী মঈজউদ্দীন বিশ্বাস। বাবা ইউসুফ আলী চৌধুরী। ইউসুফ আলী চৌধুরীকে কিং মেকার বলা হয়। তাঁর চাচা চৌধুরী আবদুল্লাহ জহিরউদ্দীন লাল মিয়া আইউব সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। আরেক চাচা এনায়েত হোসেন চৌধুরী পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।
কামাল ইউসুফের বড় মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদন্দ্বীতা করছেন। তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক। আজ ১০ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল দুপুরেই নায়াব ইউসুফ ঢাকার পথে পরিদপুর ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচনের দিনে তার পুনরায় ফরিদপুরে ফিরে আসার কথা।
কামাল ইউসুফের মৃত্যুর খবর শুনে ফরিদপুরের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক ভোলা মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে আজাদ ও শামীম হক ময়েজ মঞ্জিলে ছুটে যান। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
চৌধুরী কামাল ইউসুফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ফরিদপুর-৩ আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ শাহ মো. আবু জাফর।