দেশের মহাসড়গুলোতে ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। স্বল্পগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। বরং সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেজনক হারে বেড়েই চলে। গত শুক্রবার সারাদেশে সড়কে প্রাণ গেছে অন্তত ২৭ জনের। শনি ও রোববার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সাতজন। সোমবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে বাস ও দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ আটজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯ জন। মঙ্গলবার টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে একজন। এদিন পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও কয়েকেজন। বেসরকারি সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৮৬ জনের। দিনে গড়ে ১৬ জনের বেশি মানুষের প্রাণ যাচ্ছে সড়কে। দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এসব মৃত্যুর কারণ ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, গাড়ি ও অব্যবস্থাপনা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকেরই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেননি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত নন। আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সড়ক দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ। আবার দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে তার বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়িও দুর্ঘটনার কারণ হয়। অন্যদিকে মহাসড়কের কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলে রাস্তার পাশের জায়গা সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে।
চালকদের মাদকাসক্তিও সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। গত অক্টোবরে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের ডোপ টেস্ট করানোর ব্যবস্থা নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মালিক-শ্রমিকদের এক সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছিলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পরিবহন চালকদের ডোপ টেস্ট। এই পরীক্ষার মাধ্যমে চালকরা মাদকাসক্ত কি না, তা রাস্তায়ই পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় কোনো চালক ধরা পড়লে তাঁকে সরাসরি জেলে পাঠানো হবে। কিন্তু চালকদের সেই ডোপ টেস্ট শুরু হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের অন্যতম শর্ত সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা। যেকোনো মূল্যে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা বরাবরই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলি, দুর্ঘটনার পেছনের কারণগুলো তুলে ধরাার চেষ্টা করি এবং এগুলো সর্বজনস্বীকৃত। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দুর্ঘটনা রোধে প্রতিনিয়ত আশ্বাস পাওয়া যায়, ব্যাবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে দুর্ঘটনার হার দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় -সেগুলো বাস্তবায়নের রূপ কতটা দৃশ্যমান। পরিবহন খাতে যদি ব্যাবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা আনা না যায় তাহলে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের যেসব কর্মকা- দেখা যাচ্ছে সেগুলো অনর্থক হয়ে দাঁড়াবে।