স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা পিরোজপুর। মহান এ যুদ্ধে জেলায় নিহত হয় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ। সম্ভ্রম হারান আরো অনেক মা বোন। দীর্ঘ নয় মাসের এ যুদ্ধ শেষে ডিসেম্বরের ৮ তারিখ পিরোজপুর হয় হানাদার মুক্ত। দেশের দক্ষিনাঞ্চলের নদী ঘেরা একটি জেলা পিরোজপুর। ৯ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের বাড়ি এ জেলাতেই। ৭১ এর ২৫ মার্চে ঢাকায় ক্রাকডাউনের রাতেই পিরোজপুরের সর্বস্তরের মানুষ সশস্ত্র যুুদ্ধের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আর পিরোজপুরে মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বিশাল মুক্তি বাহিণী। এ বাহিনীতে মহিলা যোদ্ধারাও যোগ দেয়। এপ্রিলে মুক্তি যোদ্ধারা চলে যান সুন্দরবন। যেখান থেকে পরিচালিত হয় গেরিলা যুদ্ধ। পাক হানাদাররা হুলারহাট নৌ বন্দর দিয়ে পিরোজপুর দখল করার সময় কৃষ্ণনগর ও মাছিমপুর গ্রামে চালায় নির্বিচারে হত্যাজজ্ঞ। জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। পিরোজপুরকে হানাদার মুক্ত করতে ৬ ডিসেম্বর সুন্দর বনের শরণখোলা রেঞ্জ হেড কোয়াটার সাব সেক্টর কমান্ডার পরিকল্পনা বৈঠক করেন ইয়ং কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ, এডঃ সামসুল হক খান, কামাল উদ্দিন, লিয়কত আলী সেখ বাদশা, সহ অন্যান্য ইয়ং অফিসারদের নিয়ে। পরিকল্পনানুযায়ী শহরের ৩ দিক থেকে ৩টি দল শহরে প্রবেশ করে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হওয়ার খবরে ততক্ষনে পাক হায়েনারা বরিশালের উদ্দেশ্যে নদী পাড় হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা বিনা বাধায় শহরে ঢুকে থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও সরকারী বিদ্যালয়ের পাক ক্যাম্পে রাজাকারদের আত্ম সমর্পন করিয়ে অস্ত্র গুলো মুক্তিযোদ্ধারা দখলে নেয়।
পিরোজপুর সাবেক কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, গৌতম নারায়ন রায় চৌধুরী বলেন, পিরোজপুর শহর যখন বিজয়ের কাছাকাছি তখন মুক্তিযোদ্ধারা শহরের আশ-পাশসহ সমস্ত এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে ঘিরে ফেলে, তখন কেপ্টেন এজাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পালিয়ে বরিশালে চলে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী স্বাধীনতার চেতনাকে বাস্তবায়ীতকরার পাশাপাশি নতুন প্রযন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে তাদের জানানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসহ সকল প্রকার বদ্ধভূমি সংরক্ষন করা হোক।