একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকার অভিযোগে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়ের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৪ জন উচ্চতর উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ১২জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৫ জন পরিদর্শক ও ১জন নক্সাকারসহ মোট ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। গত ৭ ডিসেম্বর বিএমডিএ-এর ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষে মেন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। আর সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে থাকার অভিযোগে গত নভেম্বর মাসে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে প্রায় ৩ যুগ ধরে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পোষ্টিং নিতে অনিচ্ছুক। তাদের পছন্দের স্থান হচ্ছে প্রধান কার্যালয়। এখানে বিভিন্ন স্তরে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়সহ বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় অবস্থান করছেন। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য জেলাগুলোতে জনবলের ঘাটতি থাকায় প্রতিষ্ঠনটির উন্নয়ন কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্য সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র মতে, বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় জনবলের তুলনায় অধিক সংখ্যক জনবল কর্মরত রয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অলস ও কর্মহীনভাবে বেতনভাতা উত্তোলন করছে। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে প্রচুর জনবলের ঘাটতি থাকায় সার্বিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ইতোপূর্বে এ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় মিলে একাধিক পত্রিকায় বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়সহ বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় অবস্থানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যত্র বদলী করা সম্ভব হয়নি বলেও প্রকাশিত সংবাদগুলোতে উল্লেখ করা হয়।
আর দীর্ঘকাল ধরে একই কর্মস্থলে অবস্থান করায় তারা নানারকম অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিএমডিএ-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদের নিকট থেকে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বগ্রহণ করেন বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শ্যাম কিশোর রায় (যুগ্ম সচিব)। দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় এক বছর পর সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের সুত্র ধরে অনুসন্ধান করে প্রধান কার্যালয়সহ মাঠ পর্যায়ের একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়ে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষে বিএমডিএ-এর ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ/প্র:কা;/প্রশা:/কর্মকর্তা বদলী/১৬৯০/২০১৬-১৭/৪৮৯৮ তাং-০৭/১২/২০২০খ্রি; স্মারকে ১৬ জন সহকারী প্রকৌশলী ও বিএমডিএ/প্র:কা;/প্রশা:/কর্মকর্তা বদলী/১৬৯০/২০১৬-১৭/৪৮৯৯ তাং-০৭/১২/২০২০ খ্রি; স্মারকে ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলীর নির্দেশ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪ জন উচ্চতর উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ১২জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৫ জন পরিদর্শক ও ১জন নক্সাকারসহ মোট ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলীর পৃথক দুটি স্মারকে আদেশ জারী করেন।
বিএমডিএ-এর মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, এ বদলী আদেশে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের অভিমত দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের দফতরে বরফ গলতে শুরু করেছে।
কিন্তু বদলীপ্রাপ্ত এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এ আদেশ বাতিলের জন্য বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ইতোপূর্বে মাঠ পর্যায়ে জনবলের ঘাটতি সমন্বয়ের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলীদেরকে স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের মধ্যে জনবল পুর্নবিন্যাস করার জন্য বিএমডিএ চাকুরী বিধিমালা, ১৯৯৩ মোতাবেক ক্ষমতা অর্পনপূর্বক পত্র জারী করে। কিন্তু বিএমডিএ-এর ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একটি অংশ এ আদেশ বাতিলের জন্য অবৈধ তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা বদলী আদেশ বাতিলের জন্য প্রধান কার্যালয়ের সামনে গত ৯ ডিসেম্বর তারিখে সমবেত হয়ে অপতৎপরতা চালায়।
এ ঘটনায় বিএমডিএ-এর মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরগণ বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ প্রসংশনীয়। যা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল মহলে প্রসংশিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বিএমডিএ’র কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলী বাতিলের অপতৎপরতা মোটেই কাম্য নয়। নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে অপতৎপরতায় লিপ্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে মনে করছেন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক শ্যাম কিশোর রায় (যুগ্ম সচিব) মুঠোফোনে জানান, কৃষি বান্ধব বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ঘোষনা করেছেন, দেশের আবাদযোগ্য এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদী না থাকে। বিএমডিএ প্রধানতঃ উত্তরাঞ্চলের সেচ কার্যক্রমের সাথে জড়িত। আসন্ন সেচ মৌসুমে বিএমডিএ-এর অধিভুক্ত এলাকার আবাদযোগ্য এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদী না থকে এবং অধিস্ত অঞ্চলের কৃষকরা যেন বিএমডিএ-এর সার্বিক সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। মূলতঃ সে লক্ষ্যেই দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের একই কর্মস্থলে চাকুরীরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেখানে যেখানে জনবলের প্রচন্ড ঘাটতি রয়েছে সেখানে বদলী করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এ আদেশ জারী করেছে।