শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ২০১৯-২০ সালের সফল জয়িতাদের সংবর্ন্ধধনা দিয়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এই জয়িতারা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। তীলে তীলে কষ্টে গড়া তাদের জীবন কথাই নি¤েœ তুলে ধরা হল।
অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী আল্পনা বেগম, পিতা: আব্বাছ আলী বসবাস করেন নালিতাবাড়ী পৌরসভার কালিনগর মহল্লায়। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে এবং চার বোনের মধ্যে সে সবার বড়। দারিদ্রতার কারনে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কিছু দিন পরেই বাবা মারা যায়। ছোট বোনদেরকে নিয়ে মায়ের সংসারে হাল ধরার কেউ ছিল না। সম্পত্তি ও চাচারা দখল করে। পার্লার ও সেলাইয়ের প্রশিক্ষন নিয়ে বর্তমানে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং মায়ের সংসারে হাল ধরেছেন। সেলাইয়ের কাজ ছাড়াও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে বিউটিফিকেশন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে বাড়ীতে বসে ফেসিয়াল, বৌ-সাজানো ইত্যাদি কাজ করছেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় ৫,০০০-১০,০০০ টাকা। বর্তমানে বাড়ীতে ৪ টি সেলাই মেশিন আছে। এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি মেয়েকে সেলাই প্রশিক্ষন দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এক জন অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী।
অপরদিকে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছের নাজনীন আখতার, স্বামীঃ আবু ফজল মোঃ নাজমুল হক থাকেন নালিতাবাড়ী পৌরসভার কালিনগর মহল্লায়। কালিনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ৩ ভাই বোনসহ ৫ জনের সংসারে শুধু মাত্র মা উপার্জনশীল ছিলেন। তাই টিউশনি করে পড়ালেখা চালাতে হিমশিম খেতে হতো। বর্তমানে এম,এস,এস ডিগ্রী অর্জন করে ১১ বছর যাবৎ শিক্ষগতা পেশায় নিযুক্ত আছেন। শিক্ষকতা ছাড়াও টিআইবি, নারী ফোরাম, গণ উন্নয়ন গন্থাগার, নাট্য শ্রমী, স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন ইত্যাদি সমাজ সেবা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি এক জন শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী
এদিকে সফল জননী নারী কৃষ্ণা ঘোষ, পিতাঃ দীগেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, নালিতাবাড়ী পৌরসভার কামারপট্টি এলাকায়। তিনি তারাগঞ্জ পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক। ১৪ বছর বয়সে ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। হঠাৎ কঠিন রোগে স্বামীর মৃত্যু হয়। ২ মেয়ে ১ ছেলেকে মানুষ করার পাশাপাশি নিজেও বি,এ পাশ করেন এবং ৩ বছরে কাব্য তীর্থ কোর্স সম্পন্ন করেন। তার ৩ সন্তান ১ম সন্তান শ্রাবন্তী ঘোষ এস, এস, সি পাশ, স্বামীর সাথে মিষ্টির ব্যবসা করেন। ২য় সন্তান বর্ষা ঘোষ, সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকুরী জন্য চেষ্টা করছে। ৩য় দীপ ঘোষ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ে পশুপালন বিষয়ে শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। নানা প্রতিকুলতা অতিক্রম করে তিনি বর্তমানে তিনি একজন সফল জননী নারী।
এদিকে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী তিনি সুলতানা রাজিয়া, পিতাঃ বাবুল মিয়া, থাকেন নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের চাদগাঁও গ্রামে। সুলতানা রাজিয়ার ৮ম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। স্বামীর সাথে অন্য মেয়ের অবৈধ সম্পর্ক থাকায় স্বামীর সংসারে মারধর নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে কানের দুল কেড়ে নেওয়ার সময় কান ছিরে যায়। দেড় বছরের সন্তানসহ বের করে দিলে বাবার বাসায় চলে আসে এবং স্বামীর ডিভোর্স লেটার পায়। পরবর্তীতে বি,এস,এস ডিগ্রী শেষ করে ব্র্যাক নালিতাবাড়ী শাখায় গোল কোচ হিসাবে কর্মরত আছে। বর্তমানে তিনি একজন নতুন উদ্যমী নারী।
অপরদিকে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী নাজনীন আখতার, স্বামীঃ আবু ফজল মোঃ নাজমুল হক থাকেন নালিতাবাড়ী পৌরসভার কালিনগর মহল্লায় তিনি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনো বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২০০৪ সালে অরনি প্রগ্রেসিভ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্কুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নালিতাবাড়ী বাসিকে শুরু থেকে আকৃষ্ট করেছেন এবং অনেক অবহেলিত নারীকে কর্মের সুযোগ দিয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় তার স্কুল সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা মেডিকেলসহ বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করার সুয়োগ পেয়েছে। শিক্ষাকার্যক্রম ছাড়াও গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগার, সনাক, চেতনা, সংঙ্গীত প্রশিক্ষক ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছেন। বর্তমানে তিনি একজন সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে নারী হিসাবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছেন।