গাজীপুরের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তরপূর্ব কোণে নির্মিত টিনসেডের মসজিদে জিকির আসকার ও মুরুব্বিদের বয়ানের মধ্যদিয়ে চলছে দুইদিনব্যাপী (পরামর্শমূলক সভা) জোড় ইজতেমা। শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের রাইবেন্ড মারকাযের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জামশেদের বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় দুইদিনব্যাপী এ ইজতেমা। আলমী শূরার (শুরা-ই-নেজাম) তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার নির্ধারিত প্রায় ৪হাজার তিন চিল্লাধারী মুসল্লি এতে অংশ নেন। জোড় ইজতেমায় বেশকিছু বধির তিন চিল্লার মুসল্লি অংশ নেন। তাদের জন্য টিনসেড মসজিদের উত্তরপাশে তাঁবু তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের সমন্বয়ে কার্গোজারি (পরামর্শমূলক সভা) পরিচালিত হচ্ছে। শনিবার দুপুরের পূর্বে যেকোনো একসময় মাওলানা ফারুক আহমেদের মোনাজাতের মধ্যদিয়ে এর সমাপ্তি ঘটবে।
গতকাল টিনসেড মসজিদে জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ইজতেমার মুরুব্বি সুলাইমান শরীফ। বাদজুমা সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন মাওলানা ইউসফ। বাদ আছর বয়ান করে রাইবেন্ড মারকাযের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা ফাহিম আহমেদ।
মাওলানা ইউসুফ তার বয়ানে বলেন, পৃথিবীতে যা ঘটে তা মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাতেই ঘটে থাকে। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ইচ্ছায় যেমন কোনো ভালো কাজ করতে পারি না; তেমনি খারাপ কাজ থেকেও ফিরে থাকতে পারি না। মাখলুকের ইচ্ছায় কিছুই হয় না। সবকিছু আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায়ই হয়। তিনি বলেন, দ্বীনের কাজকে সবার থেকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং দুনিয়াবী কাজের তাগাদা পেছনে রাখতে হবে। ইমানদার মুসলমানের কাজ হবে তাবলীগের দাওয়াতে সময় দেয়া, মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোকে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জিন্দা রাখা, আলেম-ওলামাদের সহবতে থাকা, পোশাক-আশাকে নবী করিম (সা.)এর সুন্নত জিন্দা করা এবং হালাল রিজিক গ্রহণ করা।
ঢাকা কেরানিগঞ্জ থেকে আসা তিন চিল্লার সাথী আবুল কাশেম (৫৫) জানান, করোনা পরিস্থিতির জন্য এবারের জোড় ইজতেমায় গণহারে চিল্লার সাথীদের ময়দানে আসতে বারণ করা হয়েছে। আমাদের জামাতে একশ’ জন তিন চিল্লার সাথী ভাই থাকলেও মুরুব্বিদের নির্দেশে মাত্র ৮জন এখানে এসেছি। ইচ্ছে করলেও অতিরিক্ত কেউ আসতে পারছে না। সবাই আসার অনুমতি থাকলে কয়েক লাখ মুসল্লি জোড় ইজতেমায় অংশ নিতো। শনিবার মোনাজাতের পর আবার দাওয়াতের কাজে বেরিয়ে যাবো।
বধির মুসল্লিদের জিম্মাদার মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, টিনসেড মসজিদের উত্তর পাশে তিন চিল্লার বধির সাথীদের জন্য (কানে শোনে না এমন) তাঁবু নির্মান করা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের (সাংকেতিক ভাষার) মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব বোঝানো হয়। তেমনি গতকাল বধির ভাই মো. আবদুল আজিজ বধির সাথীদেরকে সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতের কাজের গুরুত্ব ও ফযিলত তুলে ধরে বয়ান করছিলেন।
এবিষয়ে আলমী শূরার মুরুব্বি ডা: কাজী সাহাবুদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই (কার্গোজারি) পরামর্শমূলক সভায় গত এক বছরে কে কি করছে এবং আগামী এক বছর কি কি করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলা হচ্ছে। পরে যার যার এলাকায় গিয়ে অন্যান্য সাথীদের নির্দেশনা দিবেন।
এব্যাপারে জিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার(অপরাধ দক্ষিণ) ইলতুৎ মিস এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ময়দানের উত্তর পাশে টিনসেডে চার জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন। শনিবার সকালে তাদের সভা শেষ করবেন। আগত মুসল্লিদের সেবায় বিশ^ ইজতেমা ময়দানে অবস্থিত পুলিশ কন্টোলরুম থেকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে।