ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের ওপর চলে আসা নির্যাতনের চিত্রটি খুব একটা পাল্টায়নি। সম্প্রতি একজন দলিত নারী তার ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। সেই সাক্ষাৎকারটি হিউম্যানস অফ বোম্বে তাদের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছে। এই পেজটি থেকে এরকম নানান ঘটনা তুলে ধরা হয়, যা মানুষকে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এই পোস্টটি দেখার পর বহু মানুষ ওই নারীর সাহসের প্রশংসা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলেই শেয়ার করছেন এই তরুণীর জীবনের কথা।
উত্তরপ্রদেশেই থাকেন তিনি। এখন আইন নিয়ে পড়াশুনো করছেন। কিন্তু কয়েকবছর আগে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারেন না তিনি।
ওই তরুণী হিউম্যানস অফ বোম্বে-কে দেওয়া ইন্টারভিউতে বলেন, ‘আমার তখন ১৫ বছর বয়স। পড়াশুনোয় আমি ভালো ছিলাম। আমার বাবা দিনমজুর। কিন্তু তবুও কষ্ট করে আমাকে পড়াতেন। একদিন বই আনার জন্য আমি বাড়ি থেকে বাইরে যাই। তখন রাস্তায় একদল ছেলে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। আমাকে একটা ধান ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আমি তাদের চিনতে পারি। আমাদের গ্রামের উচ্চবর্ণের ছেলে তারা। তিনজন ছিল। আমি ওদের হাতে পায়ে পড়ি। বলি আমি তোমাদের বোনের মতো আমায় ছেড়ে দাও। কিন্তু ওরা আমার কথা শোনে না। গণধর্ষণ করে রেখে যায়।’
ওই নারী আরও জানান, 'আমার যখন চেতনা ফেরে দেখি আমি একা ক্ষেতে, তারা কেউ নেই। কোনও মতে বাড়ি ফিরে বাবা মাকে সব জানাই। আমার মা আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। এর পরদিন থানায় অভিযোগ জানাবার জন্য আমরা বাড়ির বাইরে গেলে ওরা এসে আমাদের একটা ভিডিও দেখায়। ধর্ষণের সময় ওরা ভিডিও করেছিল। সেই ভিডিও বাজারে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। এই ভয়ে আমরা ফের বাড়ি ফিরে আসি। আমার বাবা আত্মহত্যা করে। তখন আমি নিজেই পুলিশকে সব জানাই। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।’
পুলিশ বলেছিল, এ আর নতুন কি ঘটনা। বরং গ্রামের মোড়লরা মিটিং করে ধর্ষণকারী ওই তিন জনের মধ্যে থেকে একজনকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলেন এই তরুণীকে।
ওই তরুণী বলেন, সে সময় আমি একাই গ্রাম ছেড়ে চলে আসে। এবং কোর্টে কেস করি। আমি নিজে আইন নিয়ে পড়াশুনো করছি। এবং নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি। প্রতিবার কোর্টে গিয়ে আমাকে গোটা ঘটনার বর্নণা করতে হতো। যা আমার কাছে বিভীষিকা। তবে ওই ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। অবশেষে কারাগারের পিছনে ওদের দেখে আমার শান্তি হয়। তাই বলছি কোথায় সব মানুষের সমান অধিকার। সকলে ধরেই নিয়েছে দলিতদের সঙ্গে এমন হয়েই থাকে।’