দীর্ঘ ৫৫ বছর পর গত বৃহস্পতিবার নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ শুরু হলো। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিটিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর বেলা পৌনে ১টার দিকে চিলাহাটি স্টেশন থেকে দুইটি ব্রেক ভ্যানসহ ৩০টি পণ্যবাহী ওয়াগনের বহর নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। এ সময় রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন চিলাহাটি স্টেশনে বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকার সংকেত দিয়ে ট্রেনটির যাত্রা শুরু করেন। দুপুর দেড়টার দিকে রেল বহরটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পৌঁছে। সেখানে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিবি-বিএসএফ) মিষ্টি মিনিময়সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা সোয়া দুইটার দিকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে। রেলপথে দুই বাংলার সংযোগ স্থাপনের ওই মন্দ্রেক্ষণ ঘিরে চিলাহাটি রেল স্টেশনসহ রেলবহরটিকে সাজানো হয় রঙ্গীন সাজে। স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় ১ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতার প্যান্ডেল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিটিও কনফারেন্সে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বড়পর্দায় দেখানো হয়। অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীন সরকার, নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. সামসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহদাত আলী, জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মামুনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিং স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক আবদুর রহীম, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক (সমাজকল্যাণ) সরকার ফারহানা আক্তার সুমি প্রমুখ। রেলওয়ে সূত্রমতে, ওই রেল বহরে ছিল ভারতীয় ৩০টি খালি ওয়াগন। আর রেলবহরটিকে টেনে নিয়ে যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন। এসব ওয়াগান হলদিবাড়ি রেলস্টেশনে রেখে বিকেল ৫টার দিকে পুণরায় সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসে ইঞ্জিনটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরল ইসলাম সুজন বলেন, এ পথে আপাতত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে পথটি দিয়ে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংক স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রহীম বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ পথটি বন্ধ হয়। বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে বন্ধ থাকা রেল লিংক পুণরায় চালুর উদ্যোগ নেয়। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংকটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বর্তমান রেলপথমন্ত্রী এবং ভারতীয় হাইকমিশনার। ইতোমধ্যে মেইন রেললাইনসহ আনুসঙ্গিক কাজগুলো আমরা সম্পন্ন করেছি। ভারতও তাদের অংশের কাজ শেষ করেছে। উদ্ধোধনের পর এ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান পর্যন্ত যাত্রিবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ঢাকা থেকে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার জন্য এটি একটি বেস্ট রুটে পরিণত হবে। সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৬ মার্চ থেকে এ পথে যাত্রিবাহী ট্রেন পরিচালনা করার পরিকল্পণা নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে ৫৫ বছর পর দুই দেশের রেল যোগাযোগের শুভ সূচনা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ এ পথে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন হবে। যাত্রিবাহী ওই ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবে। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এ পথে আমাদের সেভেন সিস্টারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবো আমরা।
রেল বহরে ছিলেন চালক সহিদুল ইসলাম। তিন সহকারী চালক সাইফুল ইসলাম, কমল সরকার ও শাহজাহান আলীকে নিয়ে রেল ইঞ্জিন পরিচালনা করেন। তাকে নির্দেশনা দেন পরিচালক (গার্ড) আফজাল হোসেন ও সহিদুল ইসলাম।