অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভায় চূড়ান্ত হয়েছে বড় তিন দলের দলীয় মনোনয়ন। আসছে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি ২য় ধাপে নাগেশ্বরী পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছিলো টান টান উত্তেজনা। কে হবেন কোন দলের কান্ডারি এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা কম ছিলো না সাধারণ ভোটার এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। দলীয় প্রার্থী প্রত্যাশীরা তাদের অবস্থানকে জানান দিতে বিভিন্ন সভা সেমিনারে যোগ দিয়ে এবং পোস্টার ও বিলবোর্ড সাঁটালেও শেষপর্যন্ত মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন দলগুলো। এখন শুধু উত্তেজনা, কে হবেন পৌর পিতা? কে হবেন পরবর্তী মেয়র? এমন আলোচনাও এখন সর্বত্র। তবে দলীয় মনেনানয়ন না পেয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে মনোনয়ন বঞ্চিতদের মাঝে। রাস্তার মোড় ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা। তবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জাতীয়পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ২ বারের নির্বাচিত, বর্তমান মেয়র ও উপজেলা জাতীয়পার্টির আহ্বায়ক আলহাজ¦ আবদুর রহমান মিয়াকে। মনোনয়ন পেয়ে তিনি বেশ আগে থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করে বেড়াচ্ছেন পাড়া মহল্লায় গিয়ে। করছেন খুলি বৈঠকও। তিনি বলেন, আমি ২ বারের মেয়র। নাগেশ্বরী পৌরসভার অনেক উন্নয়ন করেছি। তবে কিছু উন্নয়র অসমাপ্ত রয়েছে। পৌরবাসী আমাকে আবারও নির্বাচিত করলে আমি অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার মাধ্যমে এ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে উপহার দেব।
অপরদিকে উপজেলা জাতীয়পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল হক ফজলু জাতীয়পার্টির মনোনয়ন পেতে লবিংগ্রুপিং করলেও অবশেষে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনের আগে নাগেশ্বরী মহিলা কলেজ মাঠের এক সভায় তৎকালীন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ফজলুকে ২০২০ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে মনোনয়ন না পেলেও মাঠে থেকে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
এদিকে সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। প্রার্থীতা বাছাইয়ে তৃণমূলের ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হোসেন ফাকু ৪৬ ভোট পেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি মনোনয়ন পাননি। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ ১২ ভোট পেয়ে মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে থাকলেও মনোনয়ন পাননি তিনিও। অবশেষে মনোনয়ন পেয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আছলাম হোসেন সওদাগরের বড় ভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন ধলু সওদাগর। প্রার্থীতা বাছাইয়ে তৃণমূলে তিনি পেয়েছিলেন ৩ ভোট। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়নে তৃণমূলের রায়কে উপক্ষো করা নিয়ে শনিবার জরুরি সভা করেছে নাগেশ্বরী পৌর আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই কাজ করার কথা জানিয়েছন অনেক নেতাকর্মী।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী ফরহাদ হোসেন ধলু সওদাগর জানান দীর্ঘদিন থেকে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এবং পরিবারও আওয়ামী পরিবার। সবকিছু বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ নৌকাকে ভালোবাসেন, আমি দৃঢ় আশাশাবাদী পৌরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন। আর মেয়র হলে আমি এ পৌরসভাকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত করে একটি পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়ে তুলব।
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য ও নাগেশ্বরী আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সাবেক ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা এবারে ক্লিন ইমেজের একজন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ফেয়ার নির্বাচন হলে এবং নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি না হলে বিএনপির প্রার্থীই এবার এ পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হবেন।
এ ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জনগন আমাদের পাশে আছে। আমরা শতভাগ আশাবাদী, আমরা বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ। মেয়র হতে পারলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নগরায়নসহ পৌরসভার সকল উন্নয়নে কাজ করে যাব।