ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়নি। কিন্ত দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে আগাম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রতিদিন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ মোটর সাইকেল মোহড়া ও দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে ৩৭ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে ২৯ জনই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ইতোমধ্যে এ সকল প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। কেউ কেউ স্থানীয় এমপির আশীর্বাদ লাভের আশায় ঢাকায় তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাত করছেন। এমপির সংগে ছবি তুলে সেই ছবি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে কর্মী সমর্থকদের মাঝে প্রচার করছেন, এমপির আশির্বাদ তাঁর উপর রয়েছে। কেউ কেউ আবার বড় করে নিজের ছবির উপরে বঙ্গবন্ধু, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা, স্থানীয় এমপি এবং এমপির সহধর্মিণীর ছবি দিয়ে জনগণের আশির্বাদ ও সমর্থন চেয়ে পোষ্টার এবং প্যানা তৈরি করছেন। এ সব প্যানা এবং পোষ্টার এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং ফেসবুকে নিজের আইডিতে পোষ্ট দিয়ে নিজে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নির্বাচনী এলাকায় প্রচার করছেন। বিগত দিনে দলের সাথে কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না এমন ব্যক্তিও দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় মুজিব কোর্ট পরিধান করে ছবি তুলে প্যানা তৈরি করে দলের আশির্বাদ লাভের চেষ্টা করছেন।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় দায়িত্বশীল পদে থেকেও যাঁরা দলীয় প্রতীক নৌকার বিরোধীতা করেছেন তাঁরাও খুব জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের আশায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রথম বারের মতো নির্বাচিত বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান তাঁদের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণে এলাকায় বিতর্কিত হয়েছেন। এর মধ্যে যোগীপোল ইউপি চেয়ারম্যান দূর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া গাজীর বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশনে একটা মামলা চলমান। দিঘলিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোল্যা ফিরোজ হোসেন- এর বিরুদ্ধে করোনায় কর্মহীন মানুষের ত্রাণের মালামাল ও অর্থ আত্নসাত দূর্ণীতির অভিযোগ করে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে এবংএ সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রোন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনও নানা কারণে এলাকায় বিতর্কিত। যার কারণে আগত ইউপি নির্বাচন নিয়ে উপজেলাধীন ৬টি ইউনিয়নে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে এলাকার রাজনৈতিক সচেতন মহলের ধারণা।
খুলনা-৪ আসনের অন্তর্গত ৪টি ইউনিয়ন এবং খুলনা মহানগরীর অন্তর্গত ৩ আসনের ২টি ইউনিয়ন আড়ংঘাটা ও যোগীপোল এই ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে দিঘলিয়া উপজেলা গঠিত। এসব ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে যাঁরা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন তাঁরা হলেনঃ
দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নঃ
এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১২ হাজার ৮৭ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১২ হাজার ২৯২ জন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মোট ৯ জনের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এদের মধ্যে ৮ জনই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এরা হলেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মোল্যা ফিরোজ হোসেন, বিগত ৩ টি নির্বাচনে বিজয়ী প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা আ'লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মোঃ হায়দার আলী মোড়ল, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মঞ্জুর হোসেন, উপজেলা শ্রমিকলীগের প্রাক্তন সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য শেখ আতিকুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগনেতা এস এম হাবিবুর রহমান তারেক, উপজেলা আ'লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য কে এম আসাদুজ্জামান, আ'লীগের সমর্থক মোঃ আশরাফ শেখ, মোঃ ইনামুল শেখ এবং সতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রবি মোড়ল।
সেনহাটি ইউনিয়নঃ
এ ইউনিয়নে সর্বোচ্চ মোট ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৭৭ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৩৯ জন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এ ইউনিয়ন থেকে মোট ৮ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও আ'লীগের সমর্থক গাজী জিয়ার রহমান ওরফে জিয়া গাজী, খুলনা জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রয়াত আ'লীগ নেতা গাজী আব্দুল হালিমের সহধর্মিণী ও আ'লীগ নেত্রী ফারহানা হালিম, জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্যা আকরাম হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগনেতা ও উপজেলা আ'লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মোঃ মইনুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি গাজী মাসুদ রানা, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আঃ রকিক মল্লিক, বিএনপির সমর্থক মাসুম গাজী ও আ'লীগের সমর্থক মোঃ বজলুর রহমান বাবুল।
বারাকপুর ইউনিয়নঃ
বারাকপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ১২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৯ হাজার ৭১৩ জন। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৯ হাজার ৪১৩ জন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এ ইউনিয়ন থেকে মোট ৮ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ'লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা আ'লীগের সহ সভাপতি গাজী জাকির হোসেন, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শরীফ ইকবাল হোসেন, বারাকপুর ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি গাজী আঃ রউফ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রয়াত আ'লীগ নেতা গাজী হাফিজুর রহমানের জৈষ্ঠ্য পুত্র গাজী ইয়াসির আরাফাত হিমেল, স্থানীয় আ'লীগের সমর্থক মোঃ নজরুল মোল্যা, আশরাফ শেখ, বিএনপির সমর্থক ইমামুল শরীফ ও যুবলীগ নেতা গাজী জিয়াউর রহমান দুর্জয়।
গাজীরহাট ইউনিয়নঃ
গাজীরহাট ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৫১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৭ হাজার ৪০৮ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৭ হাজার ১০৭ জন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এ ইউনিয়ন থেকে ৪ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ'লীগের সহ সভাপতি কামালউদ্দিন সিদ্দীকি হেলাল, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান ও আ'লীগের সমর্থক মোল্যা আঃ রউফ, উপজেলা আ'লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু ও আ'লীগ নেতা ও ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন।
যোগীপোল ইউনিয়নঃ
এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৫ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৮৭ জন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এ ইউনিয়ন থেকে ৫ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বর্তমান বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান ও খানজাহান আলী থানা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিচুর রহমান, প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান ও খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি মীর কায়ছেদ আলী, খুলনা জেলা পরিষদ সদস্য ও খানজাহান আলী থানা যুবলীগের আহবায়ক সাজ্জাদুর রহমান লিংকন, আ'লীগের সমর্থক মোঃ ফয়সাল আহন্মেদ ও মোড়ল আঃ সাত্তার।
আড়ংঘাটা ইউনিয়নঃ
উপজেলাধীন ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে এ ইউনিয়নে সবচেয়ে কম ভোটার। মোট ভোটার সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৮৫ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৪২ জন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাত্র ৩ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি মফিজুর রহমান জিবলু মোড়ল, সতন্ত্র প্রার্থী ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদ আক্তার ও বিএনপির সমর্থক মোঃ মিতুল মোড়ল।