বাজারে চাল, ভোজ্যতেল, আলুর দাম বেশি থাকায় নিন্মবিত্ত আর মধ্যবিত্তের নাভিশ^াস ওঠার জোগাড়। অথচ কেন চালের দাম বাড়ছে? এ যেন এক ম্যাজিক! প্রতিদিনের বাজার করার সময় এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যখন বৃদ্ধিতে যখন পুরোদিনের রোজগার চলে যায় সেখানে একটু আরামদায়ক জীবন যাপন বহু দূরের মনে হয়। অথচ একটু আরামের জীবন সবার প্রত্যাশা থাকে। একটু ভালোভাবে বাঁচার আশা সবার অধিকার। আজকের সময়ে চাল,ডাল,তেল,নুন কেনাই সবকিছু নয়। ওষুধপত্র প্রতিটি পরিবারেই প্রায় প্রতিদিনই কিনতে হয়। তার সাথে পোশাক আর অন্যান্য খরচ মিলিয়ে নাভিশ^াস ওঠে অল্প আয়ের মানুষের। জনগণের জীবন মান নিয়ন্ত্রণের বড় নিয়ামক হলো সেদেশের বাজার ব্যবস্থা। বাজার যদি অস্থির হয় বা দ্রব্যমূল্য যদি ওঠানামা করে তাহলে জনগণের জীবনমানও ওঠা নামা করে। গড় আয় বৃদ্ধি পেলে অস্থির বাজার কোনো দেশের অভ্যন্তরের জন্য স্বস্তির হতে পারে না। দেশের নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষের প্রধান টেনশনের কারণ থাকে বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। মাছ,মাংস,তেল,ডাল,লবণ,মরিচ,আলু,আদা,পিঁয়াজসহ প্রতিদিনের আবশ্যক উপকরণগুলোই এসব মানুষের দুশ্চিন্তার বড় কারণ। তিনবেলা খাওয়ার পেছনেই যদি একটি পরিবারের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় করতে হয় তখন বাকি মৌলিক চাহিদা পূরণ কঠিন হয়ে পরে। ইদানীং মাঝে মাধ্যেই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। কখনো চাল, কখনো পিঁয়ায়,কখনো তেল,মরিচ ইত্যাদি এক বা একাধিক পণ্যের দাম বৃৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দরিদ্র ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তির কারণ। এই করোনাকালীন সময়ে জীবন যাপন এমনিতেই নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের জন্য কষ্টের তারপর বাজারের এই চিত্র তাদের নাকাল করে দিচ্ছে। অথচ সবার জন্য সুযোগ নিশ্চিত করতে হলে বাজার ব্যবস্থা দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষের জীবন যাত্রা পরিবর্তনের যে টানাপোড়েন শুরু হয় তার অন্যতম হলো আর্থিক সমস্যা। বেকার বা অর্ধবেকার জীবন যাপন করতে শুরু কর বহু মানুষ। এখনো ঘুরে দাড়াতে আরও সময় লাগবে। এরইমধ্যে বন্যার প্রকোপ মানুষকে নাজেহাল করে দেয়। বাজার অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠে। জনগণের জীবনমান আরামদায়ক করতে সবচেয়ে আগে দরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ। সাধারণ মানুষ যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে ভোগান্তিতে না পরে সেটাই প্রধান দায়িত্ব। মাঝে মাঝে সিন্ডিকেট নামের একটি শব্দ খুব আলোচিত হয়। দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও যখন বাজারে তার দাম বাড়তে থাকে তখন বুঝতে হবে সেখানে কোনো অদৃশ্য হাতের কারসাজি রয়েছে। যার নাগাল সাধারণ ক্রেতা পায় না। সব যেন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। চালের বাজার, পিঁয়াজ আবার সম্প্রতি আলুর দামও যেন ক্রমেই নাগাল ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কতৃপক্ষ আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে।
তারপরও কি বেঁধে দেওয়া দামে সব জায়গায় তা বিক্রি হচ্ছে? এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করে। আলু এমন একটি সবজি যা প্রতিদিন একেবারে নিন্ম বিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবার প্রয়োজন। সেই তরকারি হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে নিন্মবিত্ত মানুষেরা। তাছাড়া চালের বাজারও মাঝে মধ্যেই ওঠা নামা করছে। কোনো কারণ না থাকলেও বা যথেষ্ট মজুদ থাকলেও কেন চাল,পিঁয়াজ বা আলুর দাম বৃদ্ধি পায় তার উত্তর কে দেবে? বন্যার কারণে তো বহুদিন ধরেই কাঁচামরিচের ঝাঁল ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। এই যে চালের দাম বৃদ্ধি পায় তার পেছনের কারণ কি? মাছে-ভাতে বাঙালি তো মাছ আর চালের দাম বৃদ্ধি পেলে অস্থির হবেই? অস্থির বাজারের সাথে অস্থির জনজীবন। ক্রমবৃদ্ধিপ্রাপ্ত বাজারের আগুনের আঁচ লাগছে সাধারণ মানুষের উপর। বলা যায় এই তাপে তারা রীতিমত জ¦লছে। কারণ এ জ¦ালা কেবল যারা নিন্মবিত্ত আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির তাদেরই বেশি। এমনিতেই করোনাকালে খাঁড়া নেমেছে মধ্যবিত্তের ওপর। তারপর আবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে সবজির বাজার চড়া। নিন্ম আয়ের মানুষের স্বপ্ন এখন চাল কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত হলো এমন এক শ্রেণির মানুষ যারা দুই শ্রেণির মাঝে থেকে সারা জীবন চ্যাপ্টা হয় কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। যে শ্রেণির মানুষের কাছে ফেব্রুয়ারি মাসটাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলে আর একত্রিশ দিনে মাস হলো একদিনের বোঝা। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আত্মসম্মানের ভয়ে সাহায্য নিতে পারে না। এমনকি ঘরে একবেলা না খেয়ে থাকলেও কিছু বলতে পারে না। কারণ ওই আত্মসম্মান।
করোনার মহামারীতে সারা বিশে^ যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন এই মধ্যবিত্তরা রয়েছে মহাসমস্যায়। সংসার সামলানোর চিন্তায় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। সেই ভাঁজ কেউ দেখছে না। পাঁচ জনের একটি পরিবারে যদি একজন উপার্জন ক্ষম ব্যাক্তি থাকে তাহলে চাল,ডাল,সবজি কিনতেই প্রতিদিনের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে। এরপর আবার রয়েছে চিকিৎসা খরচ, পোশাক খরচ এবং এরকম হাজারটা খরচ। একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হলো, কারও আয় যতটুকুই বৃদ্ধি পাক তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখা। কোনোভাবেই যেন তা হাতের নাগালের বাইরে না যায়। বাঙালি ভাত প্রিয় মানুষ। তাই চালের মূল্য বৃদ্ধির খবরে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এখন শীতকাল। শীতকাল মানে সবজির সময়। বাজারে প্রচুর সবজিও রয়েছে। শীতের সবজির দামও কম। কিন্তু প্রতিদিন আলু ছাড়া তো আর চলে না। এই কমন তরকারির দামটা যেন আর কমছেই না! সামান্য কমলেও আবার আগের মতো হয়ে যায়। আর ভোজ্য তেল ছাড়া তো খাওয়া দাওয়া সম্ভব না। দাম বেশি হলেও কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিনের আয়ের একটি অংশ কেবল পরিবারের খাবারের পেছনেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। তাহলে বাকি সব চাহিদা মেটানোর অতিরিক্ত অর্থ কোথায় পাওয়া যাবে? একে করোনাকাল তারপর যদি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি থাকে তাহলে জীবন-জীবিকার ওপর চাপ পরে। যা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।
অলোক আচার্য
কলাম লেখক