আয় বাবারে উইঠ্যা আয়। আমি তোরে স্কুলোত ভর্তি করামু। বাবারে তোরে আর স্কুলোত ভর্তি করান হইলো না। আমারে কইছিলি তুই স্কুলোত পড়বি।এভাবেই শিশুর কবরের পাশে আহাজারি করছিলেন মা আছমা বেগম।
পৈতৃক সম্পত্তির লোভে আবদুর রহিম (১৯) নামের এক যুবক পরিবারের অন্যান্যের সহযোগিতায় তার সৎ ভাই ইউসুফ আলীকে (৫) বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নির্মম এ ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাট বুড়িরদীঘি গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ ডিসেম্বর সকালে রহিম তার সৎ মায়ের ছেলে ইউসুফকে ঘরে ডেকে নিয়ে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। এতে ইউসুফের মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ির পাশে কবর দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আবদুর রহিম, তার বাবা ছফর উদ্দিন, মা রাহেনা বেগম, বোন জোসনা বেগম, বোন জামাই রিয়াজ উদ্দিন ও অপর বোন জামাই বেলাল হোসেনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত শিশুর মা আছমা বেগম।
‘পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবদুর রহিমের ঘর থেকে বিষের বোতল উদ্ধার করেছে। ভিসেরা রিপোর্ট এলে জানা যাবে শিশুটি কী কারণে মারা গেছে বলেও জানান তিনি।
নিহত শিশুর মা আছমা বেগম জানান, তিনি স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। তাদের ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। মেয়ে সাদিয়া আক্তার মীম (৮) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
কান্না জরিত কন্ঠে আছমা বলেন, তার একমাত্র ছেলেকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে সতীনের ছেলে আবদুর রহিম ও পরিবারের অন্যরা।
আছমার অভিযোগ, স্বামীর ১৩ বিঘা জমির অংশীদারিত্ব তার ছেলে যেন না পায় সেজন্য তাকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ কাজে সতীনের ছেলে রহিমকে তার বাবা, মা, বোন ও বোন জামাইরা সহযোগিতা করেছেন।
আছমা বেগমের ভাই শফি বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বোনকে প্রায় একঘরে করে রাখা হয়েছিল। অনেক কষ্টে তিনি তার দুই সন্তানকে বড় করছিলেন। ছেলেকে হারিয়ে বোন এখন পাগল প্রায়। সর্বদা কবরের পাশে এসে কান্নাকাটি করে। শুধু সম্পদের লোভে আমার অবুঝ ভাগ্নেকে তারা বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। আমি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রধান আসামি আবদুর রহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তিনি এখন কারাগারে আছেন। অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না তবে তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।