কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে চলছে এখন চুলচেরা বিশ্লেষন। কেউ বলছেন তীরে এসেও কিনারে ভিড়তে পারেনি, ৬৪৯ ভোট কম পেয়েছে নৌকা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদার সর্বোচ্চ ৩৩৩৩ ভোট পেয়ে জিতেছেন। নৌকা প্রতীকের আবদুল বারেক মোল্লা পেয়েছেন ২৬৮৪ ভোট। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে সাধারণ ভোটাররা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নৌকার পরাজয় আলোচিত হচ্ছে। তবে এখানে স্থানীয় বিএনপি তথা চারদলীয় জোটের রাজনৈতিক কৌশলের কাছেই আওয়ামী লীগের পরাজয় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল আজিজ মুসল্লী পেয়েছেন মাত্র ৩২৬ ভোট। আর অপর প্রার্থী ইসলামি আন্দোলনের মাওলানা নুরুল ইসলাম পেয়েছেন ৫৭০ ভোট। বিগত দিনের সুষ্ঠু নির্বাচনী ফলাফলে কুয়াকাটা পৌর এলাকায় বিএনপি সবসময় নৌকা প্রতীকের চেয়ে বেশি ভোট কিংবা সমান সংখ্যক ভোট পেয়েছে। আর এই নির্বাচনে তলানীতে। এ ছাড়া নির্বাচনের তিনদিন আগে কুয়াকাটা রাখাইন মহিলা মার্কেট মাঠে বিএনপি প্রার্থীও নির্বাচনি সভায় হাজার হাজার ভোটার-সমর্থকদের উপস্থিতিতে সমাবেশ করা হয়। এই ভোট গেল কই; এমন প্রশ্নের কিছুটা জটিল হিসেব ঘুরপাক খাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে। কারণ কুয়াকাটার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে জমি অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে পর্যটনের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেছেন। আর ১৯৯৮ সালে পর্যটন হলিডে হোমস প্রথম ভবন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটার প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন যাত্রা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরে ২০০১ সালের পরবর্তী রাজনৈতিক দল বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন থমকে যায়; এটি আওয়ামী লীগ বার বার বলে আসছে। কুয়াকাটার মানুষও জানেন। এরপরে ফের ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পর্যটনের হোটেল ইয়ুথ ইন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটার ব্যাপক উন্নয়ন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড কুয়াকাটাকে ২০১০ সালে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। এরপরে কুয়াকাটার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর পেছনে ফেরেনি। এখন কুয়াকাটার উন্নয়নে মাস্টারপ্লান করেছে বর্তমান সরকার। আর তখনই নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উন্নয়ন বাধাগ্রস্তের শঙ্কাধ্বনির আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল। আওয়ামী লীগের ত্যাগী এক নেতা বলেন, বিএনপির প্রার্থী তথা দলটির নেতাকর্মীরা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের মতো কাজটি করেছে। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যেখানে তাঁদের রাস্তায় বের হয়ে সঠিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারেন না। সবশেষ মহিপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেনি। সেখানে কুয়াকাটায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে আবদুল আজিজ মুসল্লী প্রার্থী হয়ে রিলাক্স মুডে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারনা করে শেষ মুহুর্তে নৌকা ডোবানোর কাজটিও নিশ্চিত করেছেন। মূলত এই কৌশলেই বিএনপি নিজের নাক কেটে হলেও যাত্রা ভঙ্গ করল নৌকার প্রার্থী আবদুল বারেক মোল্লার। যেহেতু কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা। এখানকার মেয়র পদে সোমবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পরাজয় নিয়েই চলছে চুলচেড়া আলোচনা। বিগত দিনের সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের হিসেবে যদিও আগের চেয়ে এই নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট বেড়েছে। আওয়ামী লীগ তাঁদের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। শুধু বিএনপির কৌশলে হেরেছে এমনটা সকল নেতা-কর্মীরা মানছেন না। খোদ প্রার্থী আবদুল বারেক মোল্লা নির্বাচনের দিন সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে জানান, তিনি টাকার কাছে হেরে যাওয়ার শঙ্কা করছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদারের ব্যাংক একাউন্টের লেনদেন খতিয়ে দেখারও দাবি করেছেন। এমনকি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেছিলেন, এক ও দুই নম্বর কেন্দ্রে তার ভোটারদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। যারা এটি করছে তাঁদের নাম উল্লেখ করে প্রশাসনকে বলেও প্রতিকার পাননি। তবে সাধারণ আওয়ামী লীগের শভাকাঙ্খী পরাজয়ের জন্য প্রার্থীর টানা ২০ বছরের ক্ষমতার বিরোধী শক্তির প্রতিরোধকেও দেখছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের তফশিল শুরুর থেকে উপজেলা-জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীর প্রটোকল দেয়ার ব্যাস্ততার কারণেও ভোটারদের কাছে প্রার্থী কম যেতে পেরেছেন বলে পরাজয়ের একটি কারণ বলে মনে করছেন। স্থানীয় নির্বাচনের সকল দায়িত্ব স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। এ ছাড়া প্রার্থী আবদুল বারেক মোল্লার পারিবারিক প্রভাবকে কুয়াকাটার অনেক মানুষ মেনে নেয়নি। যাই হোক আওয়ামী লীগের কুয়াকাটা পৌর এলাকার সাধারণ নেতাকর্মী, সমর্থক এবং শুভাকাঙ্খীরা নির্বাচনের এই ফলাফলকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এনিয়ে এখন কুয়াকাটা নয়, কলাপাড়ার গোটা উপজেলা জুড়ে চলছে নানামুখি আলোচনা-সমালোচনা।