জামালপুরে চিকিৎসকদের তৃতীয় দিনে ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় চরম দূর্ভোগে স্বীকার হচ্ছে মুমুর্ষ ডেলিভারী রোগীসহ শীতজনিত আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা। অপরদিকে ২৯ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর ১টায় শহরের বকুলতলা চত্বরে জামালপুরবাসীর ব্যানারে, চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, রোগীর স্বজনদের উপর হামলা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে মৃত রোগীর স্বজন ও হাজাররো প্রতিবেশীরা।
অপর দিকে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ৭ সদস্যে বিশিষ্ঠ গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক এর কাছে ৪৬পৃষ্টা একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,তদন্ত কমিটির সভাপতি,উপসচিব পদমর্যাদা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবিক) মো. মুখলেছুর রহমান। তার কাছে প্রতিবেদনে কি উল্লেখ করা হয়েছে,তা’জানতে চাইলে তিনি এই মুহুর্তে প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালসহ সারা জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকদের তৃতীয় দিনে ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে জেলার সকল চিকিৎসা সেবা। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা লাখো মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।মারাত্বক গুরুত্বপূর্ণ ও মুমুর্ষ রোগী সেবা না পেয়ে হাসপাতাল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে মুমুর্ষ্য ডেলিভারী রোগীসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা।
পৌরশহরের ডাকপাড়ার বাসিন্দা জান্নাত বেগম তার দেড় বছরের শিশু কন্যার নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।মুসলিমাবাদ এলাকার জবেদা খাতুন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন,আমার কিডনির সমস্যা। অপারেশন করা দরকার। খুবই কষ্টে আছি।ডাক্তার কবে আসবো,ধর্মঘট কবে শেষ হবে? শুধু জবেদা খাতুন নয় তার মত জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে এ ভাইে চলে যেতে হচ্ছে। আবার অন্ত:বিভাগে ভর্তিকৃত রোগীরাও সেবা না পেয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। জরুরী বিভাগের নামমাত্র চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে,অভিযোগ রোগীদের।
অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় শহরের বকুলতলা চত্বরে জামালপুরবাসীর ব্যানারে, চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, রোগীর স্বজনদের উপর হামলা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ২ঘন্টা ব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে মৃত রোগীর স্বজন ও হাজাররো প্রতিবেশীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন সাবেক কাউসিলর বিজু আহম্মেদ,শামীম আহম্মেদ, হিরু, সোহেল, রয়েল ও রানা প্রমুখ। বক্তারা প্রত্যেকেই বলেন- ডাক্তারদের অবহেলায় করিমন নেছা(৫৫)র মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে চিকিৎসকরা নিহত করিমন নেছার স্বজনদের উপর হামলা, মারধর এবং মিথ্য মামলা করে। বক্তাদের দাবী, দ্রুত এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করাসহ, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং দোষী ডাক্তারের বিরোদ্ধে শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।
এ বিষয়ে জামালপুর ২৫০ শর্য্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য জরুরী ও অন্ত:বিভাগের সেবা চালু রয়েছে। তিনি বলেন, ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। সুষ্টু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের ৪দফা আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
গত ২৫ ডিসেম্বর অক্সিজেনের অভাবে একজন নারী রোগীর মৃত্যু ঘটনায় রোগীরা স্বজনদের সাথে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসকসহ ইন্টর্ণ চিকিৎসকদের মধ্যে সংর্ঘষ,হামলা-পাল্টা হামলা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবী করে আন্দোলনে রয়েছে জামালপুরের সকল চিকিৎসকরা।