সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে লালমনিরহাট জেলার কৃষি মাঠ। দিগন্ত জুড়ে সেজেছে সরিষা ফুলের সমারোহ। ফুলের সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে বেশ ভালই লাগে। সরিষার মাঠে গেলে ফুলের গন্ধে মন ভরে ওঠে। হলুদের ছোয়ায় যেন রং মন কেড়ে নেয়। যেদিকে তাকাই সেদিকেই হলুদ আর হলুদ রং। এ যেন হলুদের সমারোহ। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় রয়েছে বাম্পার ফলনের অঢেল সম্ভাবনা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যায় আমন ফসলহানির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আসন্ন বোরো মৌসুমের আগে আরেকটি ফসল ঘরে তোলার জন্য জেলার কৃষকরা ২ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রতি বছর লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে সরিষার চাষ হয়। প্রতি বছর ফলনও হয় বেশ ভালো। আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নামেন সরিষা চাষাবাদ করতে। একসময় লালমনিরহাটে আমন ধান কাটার পর বিস্তৃর্ণ জমিগুলো পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে লালমনিরহাটে আমন ধানের প্রায় বিশি ভাগ জমিতে সরিষা চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষকরা আশা করছেন কোনো রোগবালাই বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
আদিতমারী উপজেলার মহিশ্বাসর গ্রামের কৃষক তমিজ উদ্দিন জানান, সরিষা চাষাবাদের পরই জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। তাছাড়া সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলনও ভালো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোয়া গ্রামের কৃষক জামান মিয়া জানান, সরিষার চাষে লাভ বেশি খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রি করা যায়। অন্যান্য ফসলের মত ভোগান্তি পোহাতে হয়না, তাই প্রতি বছর সরিষা চাষাবাদ করি। এ বছরে আমি প্রায় ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি।
হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক শ্রী দেবনাথ রায় জানান, তিস্তা নদীর পানি নেমে যাওয়ার পর প্রতি বছর আমি চর এলাকায় একবিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করে আসছি। অল্প খরচে অধিক মুনাফা পাচ্ছি। সরিষা চাষাবাদ করে পরিবারের সব খরচ মেটাতে পারছি।
পাটগ্রাম উপজেলার সরকারের হাট গ্রামের শফিকুল মাষ্টার জানান, সরিষা হলো লাভ জনক ফসল, তাই অনেক আগ থেকে আমি সরিষা চাষাবাদ করি। তাছাড়া বাবা-দাদার আমল থেকে আমরা সরিষাচাষি হিসাবে এলাকায় পরিচিত। বলা যায় সরিষা আমাদের আদি ফসল। তাই প্রতিবছর সরিষা চাষ করে থাকি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়া টেপা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, এ বছর তিনি ১বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার রোগবালাই দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৬ মন হারে সরিষার ফলন হবে।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকায় রবি মৌসুমে কৃষকরা দেখছেন আশার আলো। পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভাল থাকবেন, তেমনটাই প্রত্যাশা করছেন লালমনিরহাট জেলার চাষীরা।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৫টি উপজেলায় ২ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন। এবারে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চলতি রবি মৌসুমে সরিষা চাষের জন্য কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনা হিসেবে কয়েক হাজার কৃষককে সরিষা বীজ প্রদান করা হয়েছে। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে বলেও জানান কৃষি বিভাগ।