মিথ্যা নারী নির্যাতন ও মিছ পিটিশন মামলা যা আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হয়। এভাবে পুলিশি ক্ষমতা দেখিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। একই পরিবারে চার পুলিশের নামে বে-নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তারা। আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হয়েছে পরিবারটি। তাদের এসব অবৈধ সম্পদের তদন্ত পুর্বক দুদক ও মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নিতে তাদের ৬জনের বিরুদ্ধে ১২ ডিসেম্বর রংপুর স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ে করেন ব্যবসায়ী তারিকুজ্জামান তুহিন।
ব্যবসায়ী তারিকুজ্জামান তুহিন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি ও রফতানী কারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স তুহিন এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী।
অভিযুক্তরা হলেন, রংপুরের মাহিগঞ্জ পুর্বখাসবাগ এলাকার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নুর ইসলাম ও তার ছেলে ঢাকা এপিবিএনের উপ পুলিশ পরিদর্শক(এসআই) মনিরুজ্জামান সুমন(পুলিশ আইডি নং- ৮৬১৩১৪৭৯৮৮), শিল্পাঞ্চলের সহকারী উপ পরিদর্শক(এএসআই) রোকনুজ্জামান(পুলিশ নং-৮৭০৬০৯৯৪৯), কুড়িগ্রাম আদালত পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক(এএসআই) মফিকুজ্জামান(পুলিশ নং- ৮৩০৩০৮৩১৭৮), হাসানুজ্জামান ও পুত্রবধূ কাজলি বেগম।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, নিজেকে ঢাকার এপিবিএনের এসআই পরিচয় দিয়ে মনিরুজ্জামান সুমন বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী তারিকুজ্জামান তুহিনের কাছ থেকে বাকীতে ১৮ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৫টাকার পাথর ক্রয় করেন। সেই টাকা চাওয়ায় মুঠোফোনে হুমকী দেন এবং স্ত্রী ও বোনকে দিয়ে একাধিক মিথ্যা নারী নির্যাতন ও মিছ পিটিশন মামলা করেন ওই পুলিশ অফিসার। যা আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হয়। এভাবে পুলিশি ক্ষমতা দেখিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান।
মামলার বিবরন মতে, ২০১৩ সালে পুলিশে অবসর নেয়া নুর ইসলাম রংপুর সাতমাতা পুর্বখাসবাগে ১২ শতাংশ জমির উপর ১০ তলা ভিত্তির বাড়ি নির্মান করেছেন। তার ছেলে এপিবিএনের এসআই মনিরুজ্জামান ২০১৪ সালে পুলিশে যোগ দিয়ে ৬ বছরেই ঢাকার বাড্ডায় সাড়ে ১৬ শতাংশ জমির স্বপ্নকুটিরের ১১ তলা ফ্ল্যাটের ৪০ লাখ টাকার শেয়ার মালিক। রাজধানীর সবুজবাগে এসআই মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রী কাজলির নামে ৯৬ লাখ টাকার ৮ শতাংশ জমির উপর ১০ তলার গ্রীন প্লাজা নির্মানাধিন রয়েছে। এসআই মনিরুজ্জামান এবং তার ভাই এএসআই রোকনুজ্জান, হাসানুজ্জামান ও দুইজন পার্টনারসহ যৌথ নামে ঢাকার দক্ষিণ কাজি বাড়ি মোড়ে ৫কাঠা জমির উপর ড্রিমওয়ে টাওয়ার নামে ১০ তলা ভবন নির্মান চলমান রয়েছে। আফতাব নগরে দেড় কোটি টাকা মুল্যের ৫কাঠা জমির গ্রীণ সুরভী কনস্ট্রাকশনের ব্যবসার অর্ধেক শেয়ারের মালিক এসআই মনিরুজ্জামান। ৩বছরে ছেলে আল ওয়াফির নামানুসারে আল ওয়াফি প্রোপার্টিজ লিঃ নামে রিয়েল ¯েট্যট গড়েছেন।
ঢাকা খিলগাঁও ত্রিমোহনী এলাকায় আড়াই কাঠা, বনশ্রী লিংক রোডে ৩ কাঠা জমি এবং আফতাব নগরের মেরুল বাড্ডায় ১২ কাঠা জমির উপর ১৪ তলা ড্রিম ভ্যালির ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপ্তি দিয়েছেন এসআই মনিরুজ্জামান সুমন। এছাড়াও বনশ্রী টেকেরপাড় চৌরাস্তা মোড়ে ৩ কাঠায় ৭তলা, একই এলাকার জে ব্লোকে ১০ কাঠা, পাশে ৩কাঠা ও আফতাব নগর আবাসিক এলাকার সাড়ে ৫ কাঠা, বসুন্ধরা এল ব্লোকে ৫কাঠা জমিতে নির্মাণাধিন ফ্ল্যাটের শেয়ার বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। বনশ্রী ব্লোক জে'তে গ্রীন প্লাজা ও আফতাবনগরের এল ব্লোকে ড্রিমটাচ টাওয়ার নামে বহুতল ভবন নির্মান শুরু করেছেন তিনি। এসআই মনিরুজ্জামান ২০১৬ সালে রংপুরের পীরগাছার কাজলি বেগমকে বিয়ে করে অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে স্ত্রীর নামে হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন।
এএসআই রোকনুজ্জামান ২০০৭ সালে পুলিশে যোগ দিয়ে ১৭ সালে পদোন্নতি নিয়ে তিনিও আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। তিনিও ঢাকার জিয়া স্মরণী রোড়ে ৯০ লাখ টাকায় একটি ফ্লাট ক্রয় করে ভাড়া দিয়েছেন। বাড্ডা রোড়ে কফি এক্সপ্রেস নামের ৪৫ লাখ টাকার দোকানটিও এএসআই রোকনুজ্জামানের নামে। একই সাথে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী ফাউন্ডেশন ড্রিম ক্যাসটেল প্রজেক্টের এল ব্লোকে ৮৬ লাখ টাকায় ডাবল ফ্ল্যাট ক্রয় করেন তিনি। তার নামেই রয়েছে দুইটি পাসপোর্ট। প্রায় সময় বিভিন্ন দেশে ব্যাক্তিগত কাজে ভ্রমন করেন তিনি।
এএসআই মফিকুজ্জামান ভাইদের পুলিশী ক্ষমতায় ভয় ভিতি দেখিয়ে ৭৪ লাখ টাকা মুল্যে রংপুরের কামালকাছনায় ১৪ শতাংশ জমিসহ আধাপাকা বাড়ি ক্রয় করেছেন। অপর ভাই হাসানুজ্জামান চট্রগ্রামে জাহাজে চাকুরী করলেও নিজেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে প্রতারনা করে পুলিশ কর্মকর্তা ভাইদের প্রভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও এই পুলিশ পরিবার তাদের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে ইটভাটা, চালের আড়ত, মুদির দোকান এবং নিজ এলাকায় ও ভাইদের শ্বশুর বাড়িতে রয়েছে বিপুল পরিমান ফসলি জমি। পুলিশে চাকুরীর প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ পথে অর্থ আদায় করে ২০১৪ সালে হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হয় পরিবারটি। তাদের এসব অবৈধ সম্পদের তদন্ত পুর্বক দুদক ও মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নিতে তাদের ৬জনের বিরুদ্ধে ১২ ডিসেম্বর রংপুর স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ে করেন ব্যবসায়ী তারিকুজ্জামান তুহিন।
অভিযুক্ত এসআই মনিরুজ্জামান বলেন, আমার স্ত্রী তার বান্ধবীর সাথে যৌথ ব্যবসা করে সম্পদ করেছেন। স্ত্রীর ব্যবসায় তো বাঁধা নেই। আমার মাত্র একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পুলিশের অনেকেই অনেক কিছু করেছেন। পাথরের কিছু টাকা বকেয়া থাকায় ব্যবসায়ী তুহিন মামলা করেছেন। তা আইনি ভাবে মোকাবেলা করা হবে।
কুড়িগ্রাম আদালত পুলিশের এএসআই মফিকুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ী দ্বন্দ্ব থাকলে ভাইয়ের সাথে ছিল। সেই বিরোধে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ বিভাগে আমাকে হেয় করার কোন কারণ বুঝিনি। আমিও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করবো। তবে তার কোন অবৈধ সম্পদ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
রংপুর জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট অর্পিতা বসু রায় বলেন, আসামিরা পুলিশি ক্ষমতা দেখিয়ে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাই দুদক ও মানি লন্ডারিং আইনে বাদির দায়ের করা অভিযোগটি আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তে দিয়েছেন আদালত। আগামী ২৮জানুয়ারীর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।