২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর। চীনের উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনলিয়াং সহকর্মীদের সঙ্গে সর্ব প্রথম ‘করোনাভাইরাস’ বিষয়ে সারসের মতো ফুসফুসে সংক্রমণের কথা বলেছিলেন। নয়া ওই ভাইরাসটির বিষয়ে বলার দায়ে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দেশটির পুলিশ। অভিযোগ করা হয়, ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং মিথ্যা বলছেন। অভিযোগ থেকে শেষাবধি মুক্তি মিললেও মরণঘাতি করোনাভাইরাসেই ২০২০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
উহানেই ভয়ঙ্কর করোনার জন্ম তা হলফ করে বলা কঠিন। শুরুতে কেউই ধারণা করতে পারেননি এর ভয়াবহতা। ক্ষুদ্র এক ভাইরাস সারা পৃথিবীর মানুষের জীবন তছনছ করে মৃত্যুর মিছিল, লাশের সারি, হাসপাতালে শয্যা সংকট সৃষ্টি হবে তা কেই-বা ভাবতে পেরেছেন? নানাবিধ কারণেই ২০২০ সালের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র ‘করোনা’।
গত ৩১ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত বিশ্বে ১৮ লাখ ৩ হাজার ৯৪২ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে ভাইরাসটি। ৮ কোটি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯২৪ জন মানুষের শরীরে এখনও করোনার মহামারির বিষ জমে আছে। এ পরিসংখ্যান অফিসিয়াল সংখ্যা মাত্র। করোনা যে শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েই থামছে, তা কিন্তু নয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে রীতিমতো ধস নামিয়েছে। জিডিপি কমেছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই। বেকারত্বের মিছিল তৈরি হয়েছে দেশে দেশে।
আশার তথ্য হলো মরণঘাতী করোনা নিয়ে একেবারে ভড়কে যায়নি মানুষ। ভাইরাসের শনাক্তের দুই সপ্তাহের মধ্যেই চীনা বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির জিনোম সিক্যুয়েন্স চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাসের প্রথম টেস্ট কিট তৈরি করা হয়। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্বের দেশগুলোতে পৌঁছে দেয়। আর ভাইরাস শনাক্তের মাত্র ১১ মাসের মাথায় ভাইরাসটি নির্মূলে কার্যকর ভ্যাকসিন প্রয়োগও শুরু হয়।
বিশ্বের সব থেকে দ্রুত আবিষ্কার হওয়া এই ভ্যাকসিন আশা দেখাচ্ছে দুনিয়াবাসীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। ইতোমধ্যে সংক্রমণ কমানো, চিকিৎসার উন্নয়নে নতুন নতুন তত্ত্ব ও পদ্ধতি বের করেছেন গবেষকরা।
বিদায়ী ২০২০ সালের বছরের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে করোনা মানুষের জীবন-জীবিকার গতিধারা বদলে দেয়। চিরাচরিত সব কর্মপন্থা বদলে মানুষকে নয়া বিকল্পে অভ্যস্ত করে। করোনার দাপটে মানুষ হয় ঘরবন্দি। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি চর্চার অঙ্গন হয় সংকোচিত। অর্থনীতির চাকাও থেমে যায়। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে করোনা বড় মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারতো বাংলাদেশে। কিন্তু বেশকিছু কারণে ওই প্রভাব আন্দাজের চেয়ে কমই হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। করোনায় দেশে ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৫৩১ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। সরকারি হিসাবে ৫ লাখ ১২ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে ভুক্তভোগী হয়েছেন সরাসরি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই সংখ্যা কয়েকগুণ হবে। ভাইরাসের কারণে মার্চ থেকেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ। বাতিল হয়েছে জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। চলতি বছরের পরীক্ষা নেয়া যাবে কি-না তা নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। দেশে এতো দীর্ঘ সময় শিক্ষাখাত এমন সংকটে এর আগে কখনো পড়েনি।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই আলোচনায় স্বাস্থ্যখাত। শুরুতে নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র সামনে আসলেও এক পর্যায়ে খোদ চিকিৎসা ঘিরেই অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার চিত্র প্রকাশ পায়। পরীক্ষা, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ আর সমালোচনা ছিল পুরো সময় জুড়ে।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ‘লুজিং লাইভলিহুড: দ্য লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্টস অব কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে করোনার সময়ে দেশের কর্মসংস্থানের চিত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন দেশের শহরাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ কর্মী। গ্রামাঞ্চলে এ কর্মসংস্থান হারানোর হার ৪১ শতাংশ। মহামারিতে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোও। অর্থনীতির নিষ্ক্রিয়তায় এসব দেশে সংকোচিত হয়ে এসেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারানোর দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ঢাকা বিভাগ। মহামারির কারণে এ বিভাগের শহরগুলোয় প্রতি চারজন কর্মীর প্রায় তিনজনই (৭৪ শতাংশ) চাকরি হারিয়েছেন। অন্যদিকে এ বিভাগের গ্রাম অঞ্চলে চাকরি হারিয়েছেন ৪৫ শতাংশ মানুষ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পূর্বাভাস ছিল, এই মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থনীতি সংকোচিত হবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্ব অর্থনীতির এ পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি আরো জানায়, এই সংকট বিনিয়োগকে অনিশ্চিত করে তুলেছে, অর্থনীতির ভারসাম্যে সমস্যা তৈরি করেছে। আর বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২০ ও ২০২১- এই দুই বছরে বিশ্বের ১১ কোটি থেকে ১৫ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্রের তালিকায় চলে আসবে। বিশ্বজুড়ে পূর্ণকালীন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ।
করোনার জন্ম স্থান : করোনার জন্ম স্থান খুঁজতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ধোঁয়াশা আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে, ভাইরাসটি চীনের উহানের একটি বাজারের সঙ্গে যুক্ত। তবে ল্যানসেটের একটি গবেষণায় জানা যায়, আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশের সঙ্গে ওই বাজারের কোনো সমপর্কই নেই।
ভাইরাসটি ল্যাবরেটরিতে তৈরি কি-না, তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামপ একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ভাইরাসটি যে প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া, গবেষণায় আরো জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকতে পারে ওই ভাইরাস। এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মানবদেহে করোনা: ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বাদ দিলে কিছু বিষয় রয়েছে যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা একমত। তা হলো, কোভিড-১৯ এক ধরনের করোনাভাইরাস। ভাইরাসটি মূলত সাধারণ ঠাণ্ঠা থেকে সার্সের মতো রোগের জন্য দায়ী। এটি ‘জুনোটিক’ অর্থাৎ এর উৎপত্তি প্রাণীদেহে। কিছু গবেষণা বলছে, বাদুড়ের দেহেই ভাইরাসটির উৎপত্তি। ভাইরাসটির যতগুলো ধরন আবিষ্কৃত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। বেশীর ভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন চীনেই প্রথম মানুষের দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবেই কোনো প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে করোনা ছড়িয়েছে তা কেউ বের করতে পারেনি। হয়তো কখনই এটা জানা যাবে না। ৪০ বছর আগে ছড়িয়ে পরা ইবোলা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও ওই তথ্য জানা যায়নি।
অটো প্রমোশনে শিক্ষাখাত : দেশে গত ৮ মার্চ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার ৯ দিনের মাথায় ১৭ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় ওই ছুটি বাড়ানো হয়। অফিস-আদালত খুললেও এখনো সচল হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো ‘অটো প্রমোশন’ পেয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ইউনেস্কো বলছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঝরে পড়তে পারে ২ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী।
করোনা রোধে কেলেঙ্কারি : করোনা সংক্রমণের পরপর গত মার্চের শেষ দিকে হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে ভুয়া মাস্ক সরবরাহের মধ্য দিয়ে করোনায় কেনাকাটার দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। মুগদা ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে ভুয়া মাস্ক সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। বিষয়টি নজরে আসায় মুগদার পরিচালককে করা হয় ওএসডি। খুলনার পরিচালককে প্রথমে বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং পরে পাবনা মানসিক হাসপাতালে বদলি করা হয়।
ভুয়া ওই মাস্কের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর একে একে সিএমএসডিকেন্দ্রিক ৮ শত কোটি টাকার কেনাকাটার দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সংশ্নিষ্টদের হুঁশিয়ার করেন।
করোনা-সংক্রান্ত কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. শহীদুল্লাহকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে লিখিত এক চিঠিতে তিনি দুর্নীতির পুরো চিত্র ফাঁস করে দেন। ব্রিগেডিয়ার শহীদুল্লাহর বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠন করা টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশের আলোকে সিএমএসডি পিপিই, মাস্কসহ সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয় করে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করে। সুতরাং নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রী কেনার দায় তার বা সিএমএসডির নয়।
ওই টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি ল্যাপ্রোসি ও এসটিডি এইডস কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর। সাড়ে ৮ শত কোটি টাকার কেনাকাটা তার নেতৃত্বেই হয়েছে। একইসঙ্গে ১৪২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগেও তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ উঠে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে করোনা-সংক্রান্ত সামগ্রী ক্রয় নিয়েও। ওই কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর। দুর্নীতির অভিযোগে তাকে ওএসডি করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকেও বদলি করা হয় অন্য মন্ত্রণালয়ে। একইসঙ্গে বদলি করা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত, যুগ্ম ও উপসচিব মিলে আরও অন্তত ১০ জনকে।
রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় আলোচিত সাহেদকা-ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. আমিনুল হাসানকেও সরিয়ে দেওয়া হয় দায়িত্ব থেকে।
আরিফ-সাবরিনা দম্পতি-সাহেদকা- : করোনা সংক্রমণ নিয়ে দেশজুড়ে যখন আতঙ্ক, প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে, ঠিক তখনই একে একে বেরিয়ে আসে করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ভয়াবহ দুর্নীতির কা-। জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্ণধার আরিফুল ইসলাম ও ডা. সাবরিনা চৌধুরী দম্পতি এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ নামে তিন ব্যক্তি করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ উঠে।
ওই ঘটনায় গত ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই অভিযোগে ১২ জুলাই গ্রেপ্তার করা আরিফুলের স্ত্রী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক ইউনিটের সহকারী সার্জন ডা. সাবরিনাকেও। রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদকা-।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের পাশাপাশি লাইসেন্স ছাড়াই হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন এই মহাপ্রতারক। ১৫ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। রিমান্ড শেষে ২৩ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইউনিটে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমিন জাহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে ২৮ জুলাই তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
আমরা উপলব্ধি করছি, করোনা জ্বরে জর্জরিত প্রায় তামাম দুনিয়া। অদৃশ্য করোনাঘাতে বাঁচার আকুতি নিয়ে আকাশপানে কাঁদতে দেখা গেছে মানবতার শহর ইতালিকে, বাণিজ্যিক শহর চীন বিধ্বস্ত, মেডিসিনের শহর সুইজারল্যান্ড অসহায়, প্রযুক্তির শহর জার্মানি নিরুপায়, ক্ষমতার দেশ আমেরিকা দিশেহারা, শক্তিধর কানাডা নিঃসঙ্গ, ব্রিটিশের দেশ ইংল্যান্ড খোঁজে পাচ্ছিলনা বাঁচার কোনো পথ, অস্ত্রের রাজাখ্যাত রাসিয়া- ফ্রান্সও নিস্তব্ধ, রক্ষণশীল সৌদি-ইরান-ইরাক-পাকিস্তান টালমাটাল, পোশাকের বাংলাদেশও অল্পতেই বেদশায় নিমজ্জিত। বলা যায়, চলমান বিশ্বকে কে যেনো থামিয়ে দেয়ায় এখন ব্যাক গিয়ারে যেনো চলছে বিশ্ব!
করোনায় পারমাণবিক অস্ত্রের বাহাদুরি ফিকে, বিজ্ঞান ব্যর্থ, সভ্যতার আস্ফালন স্তমিত, ক্ষমতার দম্ভ পরাজিত, মুক্তির সকল পথ রুদ্ধ; তার মানে আকাশের নিচের সকল কারামতি শেষ, একমাত্র আকাশে উপরের অধিপতির নিকট প্রার্থনা, হে জগত মালিক তুমি সহায় হও।
করোনার মহামারিকবল হতে আদম সন্তানকে বাঁচাবার উপায় হিসেবে চারিদিকে চাউর হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আবিষ্কারকৃত ‘দূরত্ব থিওরি’। অর্থাৎ ‘দূরত্ব’ বজায় রাখা। মূলত একজন অপরজনের সাথে মধ্যকার নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা। বিশ্বের সব দেশই থিওরিটি মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে চলছে। তবে ওই থিওরিটি নিয়েও রয়েছে ভুল ধরাণা। বলা হচ্ছে ‘সামাজিক দূরত্ব’। কিন্তু আমরা জোরসোরে বলে যাচ্ছি, ‘সামাজিক দূরত্ব’ নয় বরং ‘শারীরিক দূরত্ব’। ইতোমধ্যে ‘করোনা বধে ‘সামাজিক’ নয় ‘শারীরিক’ দূরত্ব’ শিরোনামে গণমাধ্যমে নিবন্ধ লিখে জনসচেতনা সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়েছি।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)