রেলওয়ের বেশি ভাগ জায়গা মানেই অবৈধভাবে দখলদার হাতে। প্রভাবশালী থেকে শুরু করে রেল ষ্টেশনের আশেপাশের আতি নেতা-পাতি নেতা সবাই রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছে। কিন্তু সঠিক নজরদারী নেই সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষের। তবে প্রতিনিয়তই কিছু কিছু অসাধু রেল কর্মকর্তারা আর্থিক লেনদের মাধ্যমে গোপনে এইসব অবৈধ দখলদারদের ইন্ধন দিয়ে আসছেন। যারই ফলশ্রুতিতে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী জংশন রেলওয়ে ষ্টেশনের অধিকাংশ জায়গায়ই বর্তমানে অবৈধ দখলের শিকার। যে অবৈধ দখল দৃশ্যমান হয় তখন রেল কর্মকর্তারা নিজেদের রক্ষা করার তাগিদে ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে সাময়িক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। তেমনই একটি উদাহরণ সান্তাহারে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে পাকা বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি।
বগুড়ার সান্তাহারে রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী পাঁকা বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে আতিকুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি আইনের নীতিমালা না মেনে সান্তাহার পৌর শহরের পান্নার মোড়ের উত্তর পার্শ্বে একটি রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন। বাড়ি নির্মাণের সকল কাজই প্রায় শেষের দিকে। রেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মাণ করায় স্থানীয়দের মনে রেল কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। একাধিক ব্যক্তিদের অভিযোগ ও স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের চাঁপের কারণে সম্প্রতি সান্তাহার রেলওয়ে জংশন ষ্টেশনের কর্তা ব্যক্তিরা বাধ্য হয়েই বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাহলে এতদিন রেলের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারন মানুষদের মাঝে। হয়তো বা আজ বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকদিন পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ করে সেখানে দখলদার বসবাস শুরু করতে পারেন এমনটিই আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সান্তাহার ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন যেখানে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সত্বেও যার বেশির ভাগই দখল করে ভোগ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। রেল লাইনের বাইরে থাকা বেশির ভাগ জমি রয়েছে বেদখলে। রেলের কর্তৃপক্ষের জোড়ালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দখল করা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় রেল বিভাগের লোকজন দেখেও দিনের পর দিন নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে। এতে বছরের পর বছর রেলের জমি বেদখলই থেকে যাচ্ছে। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সান্তাহারের বাসিন্দা মৃত আনছার আলীর ছেলে আতিকুজ্জামান পান্নার মোড় নামক স্থানে রেলওয়ের প্রায় আট শতাংশ জমি রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দখল করে ইট দিয়ে স্থায়ী ভাবে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বাড়ি নির্মাণের শুরু থেকেই রেল কর্তৃপক্ষের কোন ভুমিকা না থাকায় নির্মাণ কাজ শেষের দিকে স্থানীয়রা বাসিন্দা ও গনমাধ্যমকর্মীরা রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর সরেজমিনে কর্তাব্যক্তিরা এসে জায়গা লিজ নেওয়ার কোন তথ্যাদি আতিকুজ্জামানের নিকট না পাওয়াই বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। বাড়ি নির্মাণকারী আতিকুজ্জামান বলেন, এ জমি লিজ নেওয়া আছে। অন্যরা রেলওয়ের জমিতে যেভাবে বাড়ি তৈরি করছেন আমিও সেভাবে বাড়ি নির্মাণ করছি। বিষয়টি জানার পর রেলের কর্তাব্যক্তিরা কেন তার বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলো এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেন নাই আতিকুজ্জামান। এষ্টেট বিভাগের সান্তাহার রেলওয়ে কানুনগো কার্যালয়ের কর্মকর্তা আমিন আলিমুর রাজিব বলেন, আতিকুজ্জামান কে নিষেধ করা হয়েছে। রেলের জায়গায় বাড়ি করার তার কোন অনুমোদন নেই। সে পেশীবলের জোরে এই কাজটি করছেন। সান্তাহার রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ওয়ে) আফজাল হোসেন বলেন, রেলওয়ে সরকারি জমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই। পূর্বেও তাকে নিষেধ করা হয়েছিলো। নিষেধ অমান্য করায় আমরা তার বাড়ি নির্মানের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এ ছাড়া থানা ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছেও এই বিষয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। পরবর্তি দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রহণ করবেন।