নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচীতে আসার সময় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন হাসপাতাল গেইটে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চরএলাহী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাজ্জাকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আহতরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারী ক্লিনিকে ও নোয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রেজ্জাকসহ ৫ জনকে আটক করেছে। আটককৃত অন্যান্যরা হলেন, চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রেজ্জাকের ছেলে রাজিব হোসেন, মোঃ শরীফ, আল মাহাদী ফয়সল, আবুল কালাম।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার বসুরহাট হাসপাতাল সড়কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উপজেলার চরএলাহি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক (৪৯), তার ছেলে রাজিব (২০), ওই ইউনিয়নের আবদুর রবের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৫৫), আবদুল মমিনের ছেলে এনাম (৩২), ওজি উল্যার ছেলে রাসেল (২৫), ধনু মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম জীবন (৩৬), বেলাল হোসেন (২৫), আবুল খায়েরের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম (২৫), আবদুল মন্নানের ছেলে আবদুল মালেক (৪০), তার ভাই আবদুর রহমান (২৩), দেলোয়ার হোসেন (৩৮), মোঃ এনাম (৩৩), জামাল উদ্দিন (৩৪), মোঃ বাহার (৩৫) সহ কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। মিয়া ড্রাইভার (৫২), আবদুর রহমান (৪৯) এর অবস্থা আতংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় চরএলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণি বাদী হয়ে চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রেজ্জাককে প্রধান আসামি করে ১১জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪-৫জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আবদুল গণি এ প্রতিবেদককে জানান, চেয়ারম্যান রেজ্জাকের ব্যক্তিগত ক্যাডার ও শিবিরের দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আল মেহেদী ফয়সাল ও আবুল কালামের নেতৃত্বে আমাদের উপর হামলা করা হয়। এতে আবদুল মালেকের অবস্থা আশংকাজনক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা চত্বরে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকালে চরএলাহী ইউনিয়ন থেকে বাস যোগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে বসুরহাট বাজারে আসছিল। মিছিলটি বসুরহাট হাসপাতাল গেইট এলাকায় পৌঁছলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রাজিবকে উদ্দেশ্যে করে মিছিলে থাকা কয়েকজন উস্কানিমূলক কথা বলে। এতে মিছিলে থাকা চরএলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণি ও যুবলীগ সভাপতি রাজ্জাক গ্রুপের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পূর্ব শক্রতার জের ধরে এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’টি পক্ষ হয়ে বাকবিতন্ডার পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় সংঘর্ষেলিপ্তরা ওই এলাকার কালার ভিউ ডিজিটাল স্টুডিওসহ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে এঘটনাকে কেন্দ্র করে চরএলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণির বাড়ীতে হামলা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরএলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন মেম্বারকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মহরম আলীকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণি তার ভাই বাহার ও ভাগিনা মিন্টুর নেতৃত্বে তাদের লোকজন মিছিলে থাকা আমার ছেলে রাজিবের ওপর অর্তকিত হামলা চালায়। এ সময় আমরা তাকে বাঁচাতে গেলে আমাদেরও পিটিয়ে জখম করে তারা। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এবিষয়ে চরএলাহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাব উদ্দিন মেম্বার অভিযোগ করে জানান, তার লোকজনের ওপর রাজ্জাক চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসীরা হামলা করে কয়েকজনকে আহত করেছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রেজ্জাক ও ইউনিয়ন আওয়মীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গনি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত ও কয়েকটি দোকান ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান রেজ্জাকসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।