মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পথর ঘর নিমার্ণে অনিয়মের অভিযোগ করায় এক দম্পতিকে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে।
আশ্রয়ন প্রকল্পথর সুবিধাভোগী ওই ভুমিহীন মশিয়ার রহমান-মনিজা বেগম দম্পতিকে উদ্দেশ্য করে ইউএনও বলেছেন, পোষালে এ ঘরে থাকেন, না পোষালে জমি কিনে বাড়ি করেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওই ভুমিহীন পরিবার খাওয়ার ধান বিক্রি করে পাম্প ক্রয় করে ঘরে পানি দিচ্ছেন। ভুক্তভোগী এ দম্পতির বাড়ি ওই উপজেলার নবীনগর এলাকায়।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারী) দুপুরে ওই উপজেলার নবীনগর এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ (গুচ্ছগ্রাম)থর নিমার্ণাধীন ঘর দেখতে গেলে এমন অভিযোগ করেন মশিয়ার রহমান-মনিজা বেগম দম্পতি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পথর ঘর নিমার্ণে অনিয়ম ও উন্নয়ন কাজে বাঁধাসহ নানা অভিযোগ তুলে ইউএনওথর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও কামরুন নাহার। তার দাবী, সরকারী নিময় মেনেই আশ্রয়ণ প্রকল্পথর ঘর নিমার্ণ হচ্ছে।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে ১২৩টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১৫ টি ঘর নির্মাণের কাজ চলোমান। দুই শতাংশ খাস জমির উপর প্রতিটি টিন শেড বিল্ডিং ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ৩৯৪ বর্গফুটের ওই বাড়িতে নির্মাণ করা হচ্ছে দুটি কক্ষ, রান্নার জায়গা ও একটি টয়লেট।
ওই উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের মমিনপুর ডাঙ্গীরপাড় এলাকায় ২৫টি, বাউরা ইউনিয়নের নবীনগরের আফতাবনগর এলাকায় ৪০টি ও বুড়িমারী ইউনিয়নের কামারেরহাট এলাকায় নির্মিতব্য ৫০টি ঘরের নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখা গেছে নানা অনিয়ম। ঘর নির্মাণের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনের তুলনায় সিমেন্টের পরিমাণ কম মিশিয়ে চলছে ইটের গাঁথুনি। গাঁথুনির পর দেয়ালে দেয়া হচ্ছে না পানি। ফলে একটি ছোট বাচ্চাও যদি ধাক্কা দেয় তাহলে গাঁথুনি ভেঙে পড়বে। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে নি¤œমানের ইট।
জানা গেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটিও রয়েছে। যে কমিটিথর সভাপতি ইউএনও আর সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। কমিটিতে একাদিক সদস্য থাকলেও ইউএনও একাই পুরো প্রকল্পের সব কিছু করছেন।
মশিয়ার রহমান-মনিজা বেগম দম্পতি বলেন, ঘর নিমার্ণের সময় প্রথম দিকে পরিমাণে কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। ইট গাঁথুনির পর পানি দেয়া হচ্ছিল না। ইউএনও পরিদর্শনে এলে আমরা তার কাছে অভিযোগ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বলেন, পোষালে এ ঘরে থাকেন, না পোষালে জমি কিনে বাড়ি করেন। আপনারা যদি এতই বড় লোক তাহলে জমি কিনে নিজের মত বাড়ি করেন। এ সময় আমাদের গালিগালাজ করেন। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে খাওয়ার জন্য রাখা ধান বিক্রি করে পাম্প ক্রয় করে নিমার্ণাধীন ঘর গুলোতে পানি দিচ্ছি।
ওই এলাকার হামিদার রহমানও নিজের টাকায় পাম্প ক্রয় করে নব নির্মিত আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘরে পানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ঘরের ইট গাঁথুনির পর কোনো পানি দেয়া হচ্ছে না। যেহেতু ঘরে পরিবার নিয়ে থাকবো। সেহেতু ঘরের কাজ শক্ত করতে নিজেই পানি দিচ্ছি।
বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, কাজ ভালো হচ্ছে না বলে ডিসি স্যার একদিন ইটের গাঁথুনি খুলে দিয়েছিল।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহার অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইস্টিমেটের মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই তদারকি করেছেন। মশিয়ার রহমান-মনিজা বেগম দম্পতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ওই ব্যক্তি পেশায় একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তিনি নিজের মত বাড়ি নিমার্ণ করতে চাচ্ছে। তার সাথে প্রতিবেশীদের ঝগড়া হয়েছে। আমি তাকে শাসাবো কেন ? তাকে নিয়মের কথা বলেছি মাত্র।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঘরগুলো ভালোভাবে নির্মাণ করতে বাস্তবায়ন কমিটি আছে। তাঁরা ওখানে সার্বক্ষণিক থাকার কথা। কাজ খারাপ করার সুযোগ নেই। কাজ সম্পন্ন করতে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। তারপরও যদি অনিয়মের অভিযোগ উঠে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।