খুলনার পাইকগাছায় স্কোয়াশ চাষে সফলতা পেয়েছে তরুণ চাষি ও উদ্যোক্তা ওয়াহিদুজ্জামান লিটন। আর্থিক ভাবে তিনি হয়েছেন লাভবান। স্কোয়াশ বিদেশী জনপ্রিয় এক সবিজ। এটা মূলত শীত কালিন সবজি। দেখতে বাঙ্গি বা কাকুড়ের মত লম্ব, রং সবুজ, মিষ্টি কুমড়ার ন্যয় সুস্বাদু পুষ্টিকর সবজি। সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নতুন ভাবে এটির চাষ শুরু হয়েছে।
উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে লিটন বড়। তিন বছর আগে ঢাকায় গামের্ন্টেস এর চাকুরীতে যোগদান করে। তবে করোনার কারণে কাজ হারিয়ে মার্চেই ফিরে আসেন গ্রামে। ইউটিউবে স্কোয়াশ চাষের ভিডিও দেখে স্কোয়াশ চাষের জন্য আগ্রহী হন। ফরিদপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মামুনুর রহমানের ওরফে রাজের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে পাইকগাছা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগীতায় স্কোয়াশ চাষ শুরু করেন। গ্রামে ১ বিঘা জমি লীজ নিয়ে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় স্কোয়াশ উন্নত জাতের রেলি এফ-১ বীজ সংগ্রহ করে আবাদ শুরু করেন। ১ বিঘা জমিতে ৩০০ গ্রাম স্কোয়াশের বীজ বপন করেন। ২২টি বেডে ১৬’শ এর উপরে চারা রোপণ করা হয়। বেডগুলি মালচিং পলিদিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। স্কোয়াশ চাষে মালচিং পলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চারা টিকে গেলে চারা গোড়া মালচিং এ ঢাকা থাকায় তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং আদ্রতা ধরে রাখে। ঘাস জন্মাতে পারে না। স্কোয়াশ এর জীবন কাল ৮০ থেকে ৯০ দিন। বেলে-দোআঁশ মাটিতে আবাদ ভালো হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এর বীজ বপন করতে হয়। বপনের ৫০ দিন এর থেকে ফল ধরে। পরাগায়নের পর থেকে ১৫-১৬ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি স্কোয়াশ ওজন দেড় থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবুজ ও লম্বাকৃতির কিছু সাদা রংয়ের প্রতিটি স্কোয়াশ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ই, কে সহ কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন রয়েছে। মিষ্টি কুমড়ারমত সুস্বাদু সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে হয়। এর পাতা ও কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এর উচ্চতা এক থেকে দেড় ফুট হয়। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ চাষে জমির হারীসহ মোট খরচ পড়েছে তার ৩৫ হাজার টাকা। স্কোয়াশ চাষ করে লিটন ২ লক্ষ টাকার উপরে লাভ হতে পারে বলে আশা করছেন।
পাইকগাছা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জিকেবিএসপি’র আওতায় জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার প্রদর্শণী খামার হিসেবে উপজেলার বিরাশি গ্রামে গড়ে উঠেছে স্কোয়াশ আকর্ষণীয় খামারটি। দু’সপ্তাহ আগে থেকে বাজরে তুলছেন নতুন প্রজাতির অপরিচিত এ সুস্বাদু সবজি স্কোয়াশ। খুলনা জেলায় একমাত্র কৃষক হিসেবে স্কোয়াশ চাষী লিটন মাত্র ১ বিঘা জমির উৎপাদন থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন ওয়াহিদুজ্জামান লিটন। প্রথম তো স্থানীয় বাজার আগড়ঘাটা, গদাইপুর, পাইকগাছা ও সর্বশেষ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারী মোকাম আঠারো মাইলে স্কোয়াশ বাজারজাত করচ্ছেন। অপরিচিত হওয়ায় স্কোয়াশ চাহিদা কম থাকলেও দু’সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে স্কোয়াশ চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। ক্রেতারা এফএনএসকে জানান, তারা মোকাম থেকে পাইকারী খরিদ করে দোকানে খুচরা বিক্রি করেন। নতুন সুস্বাদু পুষ্টিকর সবজি হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে বাজারে। প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৮ থেকে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম এফএনএসকে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা জমিতে স্কোয়াশ আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং এবং ফিডব্যাক নেয়া হচ্ছে। সবজিটি ইতোমধ্যে বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগামীতে স্কোয়াশ আবাদ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।