প্রাচীন কাল থেকেই আলু উৎপাদনের জন্য পরিচিত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা। এই উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আগাম আমন ধান কর্তনের পর এখানকার কৃষকেরা একখন্ড জমিও পতিত রাখেন না। তবে শুরুতে বীজ ও সারের সরবরাহ কিছুটা সংকট থাকলেও সময়মতো ক্ষেতে আলু রোপন করায় এবার উপজেলাতে আলুর ভালো ফলন হয়েছে। এখানকার অনেক কৃষকেরা মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উৎপাদিত মিউজিকা, ডায়মন্ড ও গ্র্যানুলা আগাম জাতের আলু চাষ করেন। বর্তমান আগাম জাতের আলু উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকেরা। এখানকার আগাম জাতের আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর সেই সঙ্গে আলুর বাজারে আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন স্থানীয় চাষীরা।
কালাই উপজেলার কৃষি অফিস জানায়, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৩০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উফশী জাতের আলু চাষে হযেছে ১০ হাজার ৮শ ৩০ হেক্টর এবং স্থানীয় পাকড়ী জাতের আলু চাষে হয়েছে ৩শ হেক্টর জমিতে। উফশী জাতের আলু চাষের মধ্যে রয়েছে- মিউজিকা, ডায়মন্ড, গ্র্যানুলা, অ্যাসটিক, কার্ডিনাল, রোজেটা, ক্যারেজ আর স্থানীয় পাকড়ী জাতের আলু চাষের মধ্যে রয়েছে তেল-পাকড়ি, পাহাড়ি-পাকড়ি, বট-পাকড়ি ও ফাটা-পাকড়ি চাষ হয়েছে। উপজেলায় এবার পর্যাপ্ত পরিমান বীজ ও সার সরবরাহসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলাতে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে উপজেলার কৃষি অফিস জানায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আলুর ক্ষেতে একদিকে চলছে আলু উত্তোলনের কাজ, অন্যদিকে কেউ কেউ আলুর ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলায় ১০ থেকে ১৫টি স্থানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার মণ আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য আলু ব্যবসায়ীরা আলু কিনছে। ফলে বাজারে আলুর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমান আলুর দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় আলু চাষীরা।
উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রামের আলুচাষী সোহেল রানা বলেন, প্রতি বিঘা ৩৩শতক করে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উৎপাদিত মিউজিকা জাতের আগাম আলু রোপন করেছি। বিঘা প্রতি আলুর উৎপাদনের খরচ হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। বর্তমান প্রতি বিঘা আলু পেয়েছি প্রায় ৪৪ মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে বর্তমান আলুর বাজার দরে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা।
উপজেলার পূর্বপাড়া গ্রামের আরেক আলুচাষী আবু ইউসুফ বলেন, এবার চলতি মৌসুমে শুরুতেই আলুর বীজ ও সার সরবরাহ সংকট থাকার পরও আলুর বীজ এবং সারের দাম ছিলো অনেক বেশি। তবুও একটু লাভের আশায় ধারদেনা করে ৮ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছি। আলুর বয়স এখন ৫০ দিন হয়েছে। আরও ১০ দিন পড়ে আলু তুলব। গত বছরের চেয়ে এবার আলু দাম বেশ ভালো। তবে বীজ আলুর দাম কম থাকলে আর সরকার বেধে দেওয়া দামে আলুর বিক্রি করতে পারলে অনেক ভালো হতো।
উপজেলার হারুনঞ্জা বাজরের আলু ব্যবসায়ী মো. সিনজুনুর রহমান এলিন বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের আলু কিনকে শুরু করেছি। এলাকার কৃষকের ক্ষেতে থেকে নগদ টাকায় আগাম জাতের আলু ক্রয় করছি। প্রথমদিকে ১হাজার ৬শ টাকা পর্যন্ত মণ দরে আলু কেনা-বেচা হলেও এখন আলুর মান ভেদে মিউজিকা আলু মণ প্রতি-এক হাজার ৩০ টাকা ও ডায়মন্ড মণ প্রতি-এক হাজার টাকার দরে ক্রয় করা হচ্ছে।
উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের আরেক আলু ব্যবসায়ী মো. সুজাউল ইসলাম সুজা বলেন, উপজেলায় ১০ থেকে ১৬টি স্থানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার মণ আলু ক্রয় করে ট্রাকে নিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মাগুরা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ফেনী ও চট্টগ্রাম সরবরাহ করা হচ্ছে। এই উপজেলার আলুর মান আনেক ভালো থাকায় ঐসব স্থানে আলুর চাহিদা রয়েছে অনেক বেশি। আর এভাবে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত।
কালাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোছা.নীলিমা জাহান বলেন, এই উপজেলায় অনেক জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকেরা আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন এবং আগাম আলুর বাজার ধরে লাভবান হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। আগাম আলু চাষ খুব লাভজনক। প্রত্যাশিত ফলন ও ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।