বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় আবাদি জমিতে পুকুর কাটার হিড়িক পড়েছে। গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামজনপদে কাটা হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক পুকুর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে পুকুর কেটে আবাদি জমি কমানোর প্রবনতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বর্তমানে উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক এক্সেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে পুকুর কাটার কাজ চলছে বলে জানা গেছে। ভুমি সংরক্ষন আইনে আবাদি জমিতে পুকুর কাটা ও জমির ধরণ পরিবর্তনে নিষেধাঙ্গা থাকলেও কেউ সেই আইনের তোয়াক্কা করছেন না। দেখে শুনে মনে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো যেন অন্ধের ভুমিকা পালন করছেন।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে আবাদি জমিতে পুকুর কেটে ধরণ পরিবর্তনে নিশেধাঙ্গা জারী করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করতে হবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নির্ধারিত ফি প্রদান পুর্বক পুকুর কাটা যাবে। সেক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের দেয়া শর্ত পালন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এগুলো যেন শুধু কাগুজে ব্যাপার হিসাবে মনে করছেন ভূমি মালিক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। এদিকে পুকুর কাটার পাশাপাশি আবাদি জমির মালিকগণ তাদের জমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি করছেন ইটভাঁটি মালিকদের নিকট। এক্ষেত্রেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না নিয়মনীতির। দুই ও তিন আবাদের জমি থেকে উপরি ভাগের মাটি কেটে নিয়ে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটাতে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। এদিকে সড়কে ট্রাক্টর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সড়ক দাপিয়ে চলছে এসব ট্রাক্টর। অবাধে ট্রাক্টর চলাচল করায় দ্রুত ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে কোটি কোটি টাকায় নির্মিত স্থানীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক। সরেজমিন আদমদীঘিতে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের কাশিমালা, রামপুরা, জোড় পুকুরিয়া, দক্ষিন গনিপুর এবং চাঁপাপুর, কুন্দগ্রাম, নসরতপুর ও ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের এক শ্রেণীর জমির মালিক বেশি লাভের আশায় আবাদি জমিতে এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে গভীর ভাবে মাটি কেটে পুকুর কাটছেন। অপরিকল্পিত ভাবে এবং উপজেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অনুমতি না নিয়ে পুকুর কাটায় বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অবশিষ্ট জমির ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সচেতন মহল। তারা ইচ্ছে মাফিক পুকুর কাটার বিরোধিতা করলেও কেউ শুনছেন তাদের হাহাকারের কথা। স্থানীয়দের দাবি অবিলম্বে অবৈধভাবে আবাদি জমি নষ্ট করে পুকুর কাটার কাজ বন্ধ এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি পুকুর কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও যারা পুকুর কাটবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।