দয়া করি কাও যদি মোক একটা ছোট্ট ঘর দেইল হয় তাহলে ওই ঘরত ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করি বাকীজীবন মুই তার জন্য আঁচল বিচি দোয়া করনু হয়। হামার মন্ত্রী স্যারের কাছে মোর জীবনের শেষ ইচ্ছে পুরনে একটি দাবি, মোক একনা সরকারী ঘর দেন।‘ এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন ৭৫ বছর বয়সী কদবানু।
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর বাধের উপর বসবাসকারী ৭৫ বছর বয়সী শ্রবণ প্রতিবন্ধি কদবানু দির্ঘদিন বাস করে আসলেও সরকারি ঘর পাবার স্বপ্ন পূরণ এখনও অপেক্ষায়।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম গ্রামে তিস্তার বাধের রাস্তায় বাড়ি করে একাই কোন রকমে মাথা গুঁজে থাকেন তিনি, নেই তার স্বামী, নেই কোন ছেলে সন্তানও। একটি মেয়ে থাকলেও সেও এখন স্বামীর বাড়ীতে। কদবানুর জমাজমি নেই। বয়সের ভারে ন্যুয়েপড়া কদবানু জীবন কাটাচ্ছে তিস্তার বাধে ভাঙ্গা একটি টিনের চালায়।
৭৫ বছর বয়সী কদবানুর আকুতি যেন সেই “আসমানী কবিতার আসমানীদের হার মানায়। এমন একটি জরাজীর্ণ ভাঙ্গা টিনের চালায় বাস করেন তিনি কিন্তু সরকারী একটি ঘরের সহায়তার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার বাধে ভাঙ্গা টিনের চালায় অনেক কষ্টে বাস করেন কদবানু। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত একটি কম্বলও দেয়নি কেউ। মুজিববর্ষে শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে শুধু একটি ঘরের আবেদন ৭৫ বয়সী কদবানুর।
কদবানুর জন্য কারই বিন্দুমাত্র মমতা হয়নি! জীবনের শেষ কটা দিন নিজের একটা ঘরে থাকার জন্য অনেকের কাছে ঘুরেছেন বছরের পর বছর। অবশেষে এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে সমাজের হৃদয়বান বিত্তবানদের কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে একটি সরকারী ঘরের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এমনি আকুতি করে কদবানু বলেন, ‘বর্ষাকাল একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে আর থাকা যায়না। প্রধানমন্ত্রী অসহায়দের অনেক ঘর দিছে। আমাকে একটি ঘর দিলে বৃদ্ধ বয়সে নিজের একটা ঘরে শুয়ে মরে গেলেও শান্তিতে মরতে পেতাম। তিনি অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, দয়া করি কেউ যদি মোক একটা ছোট্ট ঘর দেইল হয় তাহলে ওই ঘরত ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করি বাকীজীবন মুই তার জন্য আঁচল বিচি দোয়া করনু হয়। হামার মন্ত্রী স্যারের কাছে মোর জীবনের শেষ ইচ্ছে পুরনে একটি দাবি, মোক একনা সরকারী ঘর দেন।‘
স্থানীয় লোকজন জানায়, স্বামী তো নেই। অনেক আগেই মারা গেছে, আর মেয়েটি যতদিন বাড়িতে ছিল তদিন তো শ্রম দিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে চলত তাদের কষ্টের জীবন। এ এলাকায় অনেকে সরকারী ঘর পেয়েছেন। কদবানুকে একটি ঘর দিলে সে উপকৃত হতো। প্রকৃত পক্ষে এই কদবানু প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার ঘর পাবার যোগ্য বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এই হতদরিদ্র কদবানুর দিকে সুদৃষ্টি দিয়ে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে তার দুঃখ দুর্দশা দূর করেন এমনটাই আশা করছে এলাকাবাসী ও সুশিল সমাজ।
দরিদ্র কদবানুর বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের ইউ,পি,সদস্য আবু তালেব বলেন অসহায় কদবানু একটি সরকারি সহায়তার ঘর দিলে তার দুঃখ দুর্দশার অবসান হতো। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো বিষয়টি সুবিবেচনা পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য।
তুষভান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম আহমেদ জানান, কদবানুুর বিষয়টি কেউ জানাননি তাই তার বিষয়টি সেভাবে দেখা হয়নি। পরবর্তিতে ঘর আসলে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।