বাড়ির উঠানে ছনের চালায় থাকার জন্য ঘরের একটি স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। সেখানেই গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি তৈলের ঘানিটি। গ্রাম্য ভাষায় যেটিকে বলা হয় তৈলগাছ। বৃদ্ধা স্ত্রীর সহযোগিতায় এবং কর্মক্ষম একটি গরু দ্বারা ঘানি টেনে সরিষার তেল তৈরী করা হচ্ছে সেই তৈলগাছ থেকে। উদ্দেশ্য সরিষা হতে তৈল তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা। সহায় সম্বল বলতে পৈত্রিকভাবে পাওয়া বাড়ি ভিটার ৫শতক জমি যেখানে টিনের তৈরী ১টি ঘর এবং তৈল গাছটি নিয়েই তার সংসার। এভাবেই বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ৮৫ বছর বয়সী মজাহার আলী তার জীবনের কথা গুলো বলছিলেন।
মজাহার আলী (৮৫) লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আলোকদিঘি এলাকার বাসিন্দা। আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকায় বৃদ্ধ বয়সেও তৈলের ঘানি টেনে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে।
সংসার জীবনে ৫ ছেলে-মেয়ে ও তারা দুজন স্বামী স্ত্রি মিলে ৭সদস্যের পরিবার। পরিবারের এতোগুলো সদস্যের ভরণ-পোষণ করতেই তার অর্জিত টাকা শেষ হয়। টাকা জমানোর কোন সুযোগ হয়না তার। ছেলে আমিনুল ও আজিজুল, ২জনই বিয়ের কিছুদিন পরেই আলাদা হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এতে তাঁর সংসার চালানো আরও কষ্টকর হয়ে পরেছে। মেয়ে মজিদা বেগম, মোর্শেদা বেগম ও কুলছুমকে বিয়ে দেওয়ার সময় যে পরিমাণ যৌতুকের টাকা গুনতে হয়েছিল, তাতে তিনি একবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
বর্তমানে কিভাবে দিন যাপন করছেন তা জানতে চাইলে বলেন, বড় ছেলের তৈরী করা ঘরের একটি কক্ষ তাঁকে থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে। মজাহার আলী ও তাঁর স্ত্রীসহ কোন মতে সেখানে নিদ্রাযাপন করেন। তৈলের ঘানি টানার এ পেশার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৬০বছর হয় এই কাজ করে আসছি, ১০বছর বয়সে বাবার সাথে একাজ শুরু করেছি। বাকী ৫০বছর তিনি নিজেই এ কাজ করে আসছেন বলে জানান। আশপাশের গ্রাম থেকে বাকীতে সরিষা কিনে ওই সরিষা থেকে তৈল তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন।মজাহার আলীর ঘানি টেনে তৈরি সরিষার তৈলের দাম জানতে চাইলে জানান, ১ কেজি সরিষার তৈল এবং খৈয়ল বিক্রি করে ২শত থেকে ২শত ৫০টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে এ দর সরিষার আমদানি বেশি হলে অনেকটাই কমে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে ছনের চালায় ঘরের স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি তৈলের ঘানিটি। গ্রাম্য ভাষায় যেটিকে বলা হয় তৈলগাছ। বর্তমানে সেখানে স্ত্রীর সহযোগিতায়, গরু দ্বারা ঘানি টানছেন মজাহার। উদ্দেশ্য সরিষা হতে তৈল তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা। সহায় সম্বল বলতে পৈত্রিকভাবে পাওয়া বাড়ি ভিটার ৫শতক জমি যেখানে টিনের তৈরী ১টি ঘর এবং তৈল গাছটি নিয়েই তার সংসার।
মজাহার আলীর বর্তমানে যে গরুটি রয়েছে তা প্রায় কর্ম অক্ষ্যম। নতুন একটি গরু কিনবে সে টাকাও জোটাতে পারছেন না।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিপূর্বেই আমরা ধোপা, নাপিত, কুলি ও তেলী এ রকম শ্রেণির পেশার তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের দিয়েছি কিন্তু মজাহার আলীর নাম আছে কিনা সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মাষ্টার বলেন, ইতঃপূর্বে এ রকম শ্রেণির পেশার যারা আছেন তাদের তালিকা ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার নাম আছে কি না সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।