সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। আশপাশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেলেও সদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি বঞ্ছিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ননী গোপাল বিশ্বাস জানান, ২০০৭ সালে ৪ আগস্ট বিদ্যালয়টি পরিদর্শণ করেন সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা মো.দেলোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খানমকে অনুনমোদিতভাবে অনুপস্থিত পান। উপকারভোগীর অনুমোদিত তালিকা না থাকা, ফলাফল বহি সংরক্ষণ না করা এবং উপস্থিতির শর্ত পূরণ না করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক ফসির আহমদ সদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি স্থগিত করেন। সেই থেকে আজ অবধি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্ছিত রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, তিনি ২০১২ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এর আগে প্রধান শিক্ষক ছিলেন লুৎফা বেগম। আমি একাধিকবার আবেদন করেছি উপবৃত্তির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য। ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম সদরপুর ও পইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থগিত উপবৃত্তি চালুর জন্য প্রধান শিক্ষকদের আবেদন সুপারিশসহ ঢাকায় প্রেরণ করেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদনে ‘মানবিক কারণে’ সুপারিশ করায় অযৌক্তিক বলে সুচিন্তিত ও যৌক্তিক মতামত প্রদানের জন্য প্রকল্প পরিচালক মো. ইউসুফ আলী একই বছরের ৮ নভেম্বর পত্র দেন। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে পুনরায় উপবৃত্তি চালুর জন্য বিদ্যালয়ের আবেদনপত্রটি সুপারিশসহ ঢাকায় পাঠান। আজ পর্যন্ত এ বিষেয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, বিদ্যালয় এলাকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্র সীমার নীচে বাস করে। উপবৃত্তি পেলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখী হবে, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষার হার বাড়বে এবং ঝড়ে পড়া হ্রাস পাবে। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সদরপুর গ্রামের অভিভাবক সাবেত্রী রায় বলেন, ‘ইসকুলের বেশির ভাগ হুরুতাইন হিন্দু এবং গরীব। সরকারে আমরারে সুবিধা দিছইন। কার দোষে আমরার হুররার হুরুতাইনতে(বাচ্চারা) ট্যাকা পাইরা না(পচ্ছে না) আমরা তানতানর(তাদের) বিচার চাইয়ার।
সিলেটের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ খান বলেন, ১৩ বছর বাচ্চারা উপবৃত্তি না পাওয়া দু:খজনক।
বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি মনিটরিং কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে বিষয়টি ঢাকা অফিসকে অবগত করবো।
উপবৃত্তির প্রকল্প পরিচালক মো. ইউসুফ আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।