আগামী ১৬ জানুয়ারী নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেুতমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির ছোট ভাই আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন- নির্বাচনের বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব এবং করে যাবো। আমি যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছি, দল আমাকে প্রার্থী দিয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ আমাকে সহোযোগীতা করতেছে, আশা করি আগামীতেও করবে। প্রশাসন থেকে কোন সহযোগীতা পাচ্ছি না। আমি সকল আনিয়মের বিরুদ্ধে জন প্রতিরোধ গড়ে তুলব। জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা নিয়ে আমি এ নির্বাচন করছি। আমি যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলি, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, আমি নোয়াখালীর ত্যাগী নেতাদের পক্ষে কথা বলি, আমি যখন কবিরহাটের নীরিহ নেতাকর্মীদের কথা বলি, আমি যখন আমার কোম্পানীগঞ্জের অসহায় ছেলে মেয়েদের চাকুরীর কথা বলি, তখন আমাকে জাতীয় ভাবে বলা হয় পাগল ও উম্মাদ।
তিনি বলেন, কোম্পানীঞ্জের প্রশাসনের ওপর দোষ দিয়ে লাভ নাই, তাদের কিছু করার নাই। নোয়াখালী ডিসি মোঃ খোরশেদ আলম কে উদ্দেশ্যে বলেন, ডিসি কসম খেয়ে বলেছেন, আমি একরাম চৌধুরীর নাম লেখা মাস্ক পড়িনি। আপনি যে মাস্ক পড়েছেন, সে মাস্ক এ জেলার এক অপকর্মকারী এমপির নাম লেখা। এ প্রসঙ্গে মির্জা কাদের বলেন, যদি নোয়াখালীর দুর্নীতিবাজ নেতা একরাম চৌধুরী নাম লেখা মাস্ক ডিসির মুখে না থাকে, এ মূহুর্তে আমার ওপর আল্লাহর গজব পড়-ক। এরা মাসোয়ারা খায়, তাদের কাছে কি আপনারা ন্যায় বিচার পাবেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব কিছুই না করলে আমি কি করুম। আমি কতক্ষণ বদতাস করুম।
আমি আগামী ১৬ তারিখে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে প্রমাণ করব, আমি পাগল নাকি ভাল। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ না করে বলেন, গোপালগঞ্জে ৯৯ভাগ লোক আওয়ামী লীগ করে, তিনি সেখানের এমপি, আগে মন্ত্রী ছিলেন এখন নেই। তিনি কি কি অনিয়ম করেছেন দেশবাসী জানেন। আনিয়ম না করলে তিনি মন্ত্রী হন নাই কেন? তিনি আমাকে বলেন আমি নাকি পাগল ও উম্মাদ। আমি আগামী ১৬ তারিখে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আমি তাকে বুঝিয়ে দিব আমি পাগল নাকি উম্মাদ। তিনি আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নাম উল্লেখ না করে বলেন, আমাদের আরেকজন নেতা আমাকে বলে আমার মধ্যে নাকি দায়িত্বশীলতার অভাব আছে। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলেছে, তখন তিনি কি করেছেন? তিনি কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন? এগুলো বন্ধ করেন, আমাকে কি করবেন, আমাকে মেরে ফেলবেন, বহিষ্কার করবেন, জেলে দেবেন? অসুবিধা নাই আমি প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমি সারাদেশের কথা বলি নাই। আমি শুধু নোয়াখালী ও ফেনীর অপরাজনীতির কথা বলেছি। আজ আমার নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। মৌলবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্র করছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। আমার নেত্রীকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হচ্ছে, দল দেখতে হচ্ছে, দেশ দেখতে হচ্ছে, দেশের শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ঠিক রাখতে হচ্ছে। তার কি সময় আছে নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ দেখার। এগুলো কার দায়িত্ব? কেন্দ্রীয় নেতাদের না? আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা চাটুকার, তারা রাত দিন শেখ হাসিনাকে উত্ত্যক্ত করছে, অধিকাংশ নেতা তাঁকে অসহযোগিতা করছে।
আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, গত পরশুদিন চট্টগ্রাম থেকে কবিরহাটে এক বাড়িতে অস্ত্র এনে রেখেছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য। এস্ত্রধারীরা যে কোন সময় কোম্পানীগঞ্জে ঢুকে যেতে পারে, আপনারা সাবধানে থাকবেন। যদি কোম্পানীগঞ্জে নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র হয়, নির্বাচনে রং লাগানোর ষড়যন্ত্র চলে। কোম্পানীগঞ্জের আমার একজন কর্মীর ওপরও হাত লাগে, যদি কোম্পানীগঞ্জে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, কোন মায়ের বুক খালি হয়, কারো ঘরে আগুন লাগায় এবং ঘরের খড়ের গাঁধায় আগুন লাগায় সব দ্বায়-দ্বায়িত্ব ডিসি ও এসপি কে নিতে হবে। জনতার কাতারে আপনাদের বিচার করা হবে। ফেনীর একটা উপজেলা চেয়ারম্যান কে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রথমে গুলি করে, পরে তাকে গাড়িতে ঢুকিয়ে পেট্রোল মেরে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলেছে। তার পরিবার এখনও বিচার পায়নি। আমি এর প্রতিবাদ করলে, আমাকে তারা বলে, পাগল ও উম্মাদ। নির্বাচনের বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সময় আন্দোলন করেছি। শেখ হাসিনা ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন, ভোটের অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হলো হাওয়া ভবনের জট। তারেক জিয়া দিয়ে দেশের ভালো কাজ হতে পারে না, তার মা খালেদা জিয়া ঘরে ঢুকে গেছে। হাসিনার পিতা এদেশে স্বাধীনতা দিয়েছে, হাসিনা ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন শেখহাসিনাকে ভোটের অধিকারের জন্য কাজ করতে হবে, আমরা কোম্পানীগঞ্জ থেকে সহযোগিতা করব। রাতারাতি কিছুই করা সম্ভব হয় না। কিছু কিছু এমপি টাকা পয়সা দিয়ে নমিনেশন নিয়েছে, জীবনে কোন দিন এলাকায় যায় নাই, কাউকে চা খাওয়ায় নাই, গরীব মানুষ চিকিৎসার অভাবে মরে যায়, তাদেরকে সহযোগিতা করে নাই, গরীব মানুষের বিয়েতে সাহায্য করে নাই। তারা ভোটে ধারাইয়া মাস্তান ভাড়া করে পেশী শক্তি প্রয়োগ করে এমপি হয়ে যায়। আমি ভালো কে ভালো বলব, খারাপকে খারাপ বলব, কালোকে কালো বলব, সাদা কে সাদা বলব। আমি কাউকে ভয় পাই না। বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় ভালো ভোট হয়, যেমন আমাদের রাষ্ট্রপতি হামিদ সাহেব সব সময় এমপি হন, সরকারী দলে থাকলেও এমপি হন, বিরোধী দলে থাকলেও এমপি হন। প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা যোগ্য নেতাকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন। সত্য কথা বলে কবরে যেতেও প্রস্তুত আছি। আমি ৪৭বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্ম নেইনি। আমি গরীব স্কুল শিক্ষকের সন্তান, আমি ছেঁড়া জামা কাপড় পরে স্কুল, কলেজে লেখাপড়া করেছি। গরীবীর সাথে লড়াই করে শৈশবের দিনগুলো পার করেছি, আমার গরীব বাবা আমাকে জামা কিনে দিতে পারেনি, ঠিকমত ভাতও খেতে পারিনি, আমি না খেয়ে রাজনীতি করেছি। আমি কতদিন উপবাস করেছি, পবিত্র ঈদের দিন না খেয়ে কলেজের হোস্টেলে শুয়ে ছিলাম। ডিসি, এসপি কে বলছি নির্বাচনে কোন প্রকার অনিয়ম হলে, ১নং আসামি হবেন ডিসি, ২নং আসামি এসপি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ সিনিয়র নেতারা অনিয়ম করলে তাদের বিচার করতে হবে। আমি ২জেলার ১১জনের নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছি। তারা দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে।
মির্জা কাদের আরও বলেন, কোম্পনীগঞ্জ ও কবিরহাটে আগামী ৩মাসের মধ্যে গ্যাংস সংযোগ দেওয়া হবে। যদি আমার এলাকার গ্যাস আমাদের দেওয়া না হয়, তাহলে জাতীয় গ্রীডে সাড়ে ৭বিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেব।
তিনি শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে, বসুরহাট পৌরসভার টিএন্ডটি রোডে, পৌরসভার বটতলায় পথসভায় ও পৌর মিলনায়তনে কর্মী সমাবেশে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহাব উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী, বসুরহাট পৌরসভা আ.লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আজম পাশা চৌধুরী রুমেল।