মোর আড়াই শতক ভুই (জমি)। ভাল একনা ঘর নাই।ভাঙ্গা ছাপরা একনা টিনের চালা। ওকনা চালার নিচত তিন তিনকোনা গাবুুর বেটি (বড় মেয়ে) নিয়া আইত (রাত) কাটাং (কাটে)। আইতে ঘুমির পাং (রাতে ঘুমাতে পারি) না, বৃষ্টির দিনোত চালা দিয়া পানি পড়ে। ঘরের খেথা-বালিশ সউগ(সব) ভিজি (ভিজে) যায়। শীতের দিনোত বাতাস ঢোকে ঘরের ভেতরোত। স্বামী মরছে দেড় বছর হয় বিধবা ভাতার কার্ড ও পাং নাই।
মুই তো মোর কষ্টের কতা(কথা) চেয়ারম্যান-মেম্বারের কতবার কছুং (বলেছি) ৷ কাও মোর ভাতা করি দেয় নাই৷ মুই সরকার থেকে যদি একনা ঘর পানুং হয় (পেতাম) তাইলে বাকি জীবনটা একনা ভালো করে কাটনুং হয় (কাটাতে পারতাম।
এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ফাতেমা(৩৯) নামের এক বিধবা নারী।
ফাতেমা উপজেলার ৪নং দলগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ দলগ্রাম (হাজীপাড়া) এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের মৃত সামছুল হকের স্ত্রী।
প্রায় দশ বছর ধরে দারিদ্র্যের কষাঘাতে দূর্বিষাহ জীবনযাপন করছেন ফাতেমা। এমন একটি জরাজীর্ণ টিনের চালায় বাস করেন অথচ সরকারী একটি ঘরের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার।
দির্ঘদিন ধরে স্বামী হারা হলেও এখন পর্যন্ত ওই নারীর ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতা, ভিজিডি কার্ড কিংবা মাথা গোঁজার মতো একটা সরকারী ঘর। তিন মেয়েকে নিয়ে ভাঙ্গা একটি টিনের চালায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পোহাতে হচ্ছে তাকে।
জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকতে সারাদিন পরিশ্রম করার পর রাতে একটু ভালভাবে ঘুমাবে, তবে সেখানেও নেই তার শান্তি। কারণ বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায় তার বিছানাপত্র। তবুও জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার তাগিদে জরাজীর্ণ ভাঙ্গা টিনের চালায় রাতভর ছটফট করে তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতে হয় ফাতেমাকে। মুজিব বর্ষে সরকারি একটি ঘর পাওয়ার আকুতি জানান ওই বিধবা নারী।
রোববার (১০ জানুয়ারী ) সকালে বিধবা ফাতেমা বেগমের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একটি মাত্র টিনের ভাঙ্গা চালায় তিন মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে বসবাস করছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে তার স্বামী তিন কন্যা সন্তানকে রেখে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সহায় সম্বল বলতে কিছু নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর ৪০ দিনের মাটিকাটা কাজ করে তিন মেয়েদের নিয়ে ভাঙা একটি টিনের চালায় খুব কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
টিনের চালাটি ঝড়-বৃষ্টির দিনে যে কোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছ। আশ্রয়স্থল যদি ঠিক না থাকে তাহলে দিনরাত পার করা খুব মুসকিল। জীবন-যাপন করার জন্য মোটামুটি ভালো আশ্রয়স্থলের একটি ঘর তার খুব প্রয়োজন। স্থানীয়দের প্রশ্ন এতদিনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরগুলো আসলে পাচ্ছেন কারা?
ওই বিধবা নারীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি গৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
দলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ বাবুল বলেন, আমার জানা মতে তাকে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে তার নাম আছে। কিন্তু তার যে থাকার জন্য ঘর নেই তা আমার জানা ছিল না। তাছাড়া আমি নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার বিষয়টি জানলাম, তাকে একটি সরকারী ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।